কমেন্টস সংক্রান্ত কতিপয় কথা ও লেখকদের জন্য আমার কিছু পরামর্শ : আসাদ বিন হাফিজ

 কমেন্টস সংক্রান্ত কতিপয় কথা

আমাকে মাফ করবেন। আপনারা অনেকেই জানেন আমি আমার প্রশংসা করে কোন কমেন্ট করলে তার জবাব দেই না। কারণ একজন প্রশংসাখোর অল্পদিনেই অহংকারী হয়ে যেতে পারে। আমি অহংকারী হতে চাই না।

আমি বা আপনি কিসের প্রশংসা চাই। সমস্ত প্রশংসার মালিক তো আমাদের স্রষ্টা মহান প্রভু।

♦ আমাকে লেখার যোগ্যতা তিনি দিয়েছেন। যদি তিনি আমাকে দিয়ে কোন ভাল কাজ করান, সেটা তার মেহেরবানী। তিনি শুধু লেখার যোগ্যতাই দেননি, সময় এবং সুযোগও সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ফলে প্রশংসা সব তাঁর। এখানে আমি কিছুই না।

♦আমার ভাব, শব্দচয়ন, বাক্যগঠন, ছন্দ, উপমা, চিত্রকল্প সবই তিনি সাজিয়ে দেন। একমিনিট আগেও আমি জানতাম না, আমি কি লিখবো, কেমন করে লিখবো? ফলে তার শোকরিয়া আদায় করা ছাড়া আমার আর করনীয় কিছু নেই।

♦আমাকে কেউ কোন প্রশ্ন করলে, কিছু জানতে চাইলে আমি সাধ্যমত তার জবাব দেই।

♦কেউ আমার ভুল ধরিয়ে দিলে তাকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চেষ্টা করি।

♦ কেন কমেন্টের জবাব দিতে হবে এ জিনিসটাই আমি বুঝিনা। এমন তো না, আপনার কমেন্ট পড়ে আমি লিখি।

♦ সালামের জবাব দিতে হয়। এটা ওয়াজিব। কিন্তু জওয়াবের কেন জবাব দিতে হবে এটা আমার বুঝে আসে না। তাহলে তো এরপর আমার জওয়াবের জবাব আপনাকে দিতে হয়। তাহলেতো আপনার বাড়ি পর্যন্ত আমি এগিয়ে দেবো বিনিময়ে আপনি আবার আমার বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেবেন। এভাবে চলতেই থাকবে।

♦ আমি আমার মেধা খাটিয়ে সারারাত বসে একটা লেখা তৈরি করলাম। আপনি এক বা একাধিক শব্দে একটা কমেন্ট করে তার বিনিময় চান। তাহলে আমার সারারাতের পরিশ্রমের বিনিময় কে দেবে?

♦ মানে, আমি সারারাত খেটে আপনার মনের তৃপ্তির জন্য একটা রান্না করলাম। এটা কি আমার অপরাধ হয়ে গেল? আমি কেন ভাল রান্না করলাম, সেজন্য আপনার কমেন্ট পড়ে আমাকে কৈফিয়ত দিতে হবে।

♦ আমি একজন মানুষ একটা কবিতা লেখে কি খুব অন্যায় করে ফেলেছি? আপনারা হাজার জন পড়বেন, একশোজন মন্তব্য করবেন, আর সেই একশোটা কমেন্টের জবাব আমাকে আলাদা আলাদাভাবে দিতে হবে। মানে, আমার কবিতা পড়ে যতজনের ভাল বলবে, সবাইকে গিয়ে আমার বলতে হবে, ভাল হবেনা, দেখতে হবে না লেখেছে কে?

♦ আচ্ছা, লেখকরা কি ভিক্ষুক? লেখকরা কি আপনাদের কমেন্টের জন্য ঘিরে ধরে?  লেখকরা শুক্রবারে মসজিদের সামনে থালা নিয়ে বসে থাকে, আর আপনারা সিকিটা আধুলিটা দিয়ে লেখককে ধন্য করেন? কি মনে হয় আপনাদের?

♦ লেখকরা কি ঘুষখোর? কমেন্টের জবাব দেয়া মানে আপনাকে ঘুষ দেয়া।যাতে আপনি খুশী হয়ে আবারো কমেন্ট করেন।

তাই নয় কি? মানে কাজ এগিয়ে দেয়ার জন্য পিয়নকে বকশিশ দেয়া।

♦ বুঝিনা লেখককে আপনারা কি ভাবেন। লেখক লিখবেন, আপনি যেন পড়তে পারেন সে জন্য সময় ব্যয করে বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দেবেন। আপনার প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসার ব্যাখ্যা দেবেন। তারপর আপনার বিজ্ঞ কমেন্টের জবাব দিবেন। লেখকের কি আর কাজ নাই? তার বাসার চাল কি আপনি কিনে দেন?

♦ ধরুন একটা লেখা আমি দশটা গ্রুপে দিলাম। প্রতি গ্রুপেই হাজার হাজার সদস্য। গড়ে দশজন করে কমেন্ট করলেন। মানে দশগ্রুপ থেকে একশজন। এই একশ জনকেই ধন্যবাদ দিতে হবে লেখককে। নইলে সৌজন্যতা রক্ষা হয় না। তাইতো?

♦ আচ্ছা, এবার বলুন, যদি তিনি এই সৌজন্যতা রক্ষা না করে এই সময়ে আরো একটা কবিতা লিখতেন বা অধ্যয়নে সময়টা ব্যয় করতেন, তবে বাংলা সাহিত্যের লাভ কি কম হতো, না, বেশী হতো?

লেখকদের জন্য আমার কিছু পরামর্শ

♦ আমি মনে করি প্রতিটা মুহূর্ত লেখকের ব্যয় করা উচিত লেখার মান ও পরিমান বৃদ্ধির জন্য। পড়ুন পড়ুন এরপর লিখুন।

♦ লেখক মনের আনন্দে লেখে। পাঠক আনন্দ পাওয়ার জন্য পড়ে। এখানে কোন জবরদস্তি নাই। আপনার ইচ্ছে হলে লেখবেন, পাঠক ইচ্ছে হলে কমেন্ট করবেন, না হলে নাই।

♦ ভাববেন না পাঠক যা বলছে তার সবটাই ঠিক। কেউ "অসাধারন" মন্তব্য করলো আর আপনি অসাধারণ লেখক হয়ে গেলেন এমন ভাবা ঠিক না। হয়তো আপনার লেখা সত্যি অসাধারণ তাই লিখেছে। কেউ হয়তো লিখেছে আপনাকে খুশী করার জন্য। কেউ হয়তো না পড়েই কপি পেস্ট করেছে। তাই মনে রাখবেন, মন্তব্য কোন লেখার মানদন্ড নির্ধারণ করে না।

♦ আপনি আপনার বন্ধুদের অনুরোধ করুন লেখা পড়তে। যারা পড়বেন তারা যেন কমেন্ট না করলেও লাইক করেন। তাতে পাঠকের সময় বাঁচবে, আপনার সময়ও বাঁচবে, কিন্তু আপনি জানতে পারবেন কি পরিমান লোক আপনার লেখা পড়েছে।

♦ আপনি দেখুন লেখায় কি পরিমান কমেন্ট পড়েছে। আপনিও প্রতিটি কমেন্ট পড়ুন ও লাইক দিন, যাতে মন্তব্যকারী জানতে পারে আপনি তার কমেন্ট পড়েছেন।

♦ যদি কেউ সংশোধনী বা পরামর্শ দেয় তাকে ধন্যবাদ দিন।

♦ যে সব কমেন্টের জবাব দেয়া দরকার সেগুলোতে জবাব দিন।

♦ যদি কোন বন্ধুর আপনার লেখাটি পছন্দ হয়ে যায়, তাকে অনুরোধ করুন কপি করতে বা শেয়ার করতে। তাতে তার বন্ধুরাও একটি ভাল লেখা পড়ার সুযোগ পাবে। এভাবে বন্ধুদের সহযোগিতায় ভাল লেখার প্রসার ঘটবে।

♦ বিনা প্রয়োজনে ইনবক্স ব্যবহার করবেন না। শুধুমাত্র সালাম দিয়ে নিজের ও অপরের সময় নষ্ট করবেন না।

♦ ভাল লেখাকে ভালবাসুন এবং নিজেও তা শেয়ার করুন।

♦ সাম্প্রতিক কালে তরুণরা অনেকেই লেখার ব্যাপারে যত্নশীল। তাদের মেধা, প্রজ্ঞা, নিষ্ঠা আমাদের চেয়েও ভাল। তারা নানা পরীক্ষা নিরীক্ষাও চালাচ্ছে লেখায় বৈচিত্র সৃষ্টির জন্য। আপনি যদি চাটুকারের পাল্লায় পড়ে যান কখন যে ছিটকে পড়বেন, টেরও পাবেন না। আগে মানসম্মত লেখা তৈরী করুন, পরে বই বের করার উদ্যোগ নিন।

♦ সময়ের দাম দিন। সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করুন। নারী বন্ধুরা আবৃত্তিচর্চা বাড়ান।

♦ আমার ফ্রেন্ডলিস্টে নতুন কাউকে এড সুযোগ নাই। যারা আমার সাথে যুক্ত হতে চান তারা দয়া করে আসাদ বিন হাফিজ  পেইজে চলে আসুন।

ভাল লাগলে এরকম চিন্তা ছড়িয়ে দিন।

১৬/৯/২০

No comments

Powered by Blogger.