সিএইচপি ও সাঈদী বিষয়ক জটিলতাঃ আসাদ বিন হাফিজ

সিএইচপি ও সাঈদী বিষয়ক জটিলতাঃ আসাদ বিন হাফিজ

সিএইচপি নিয়ে একদেশদর্শী মন্তব্য এবং সাঈদী সাহেবকে অতি আবেগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া কোন ভাল কাজ নয়। আমাদেরকে ইসলামের বিধান দিয়ে চলতে হবে, আমার ভাললাগা ও আবেগ দিয়ে ইসলামকে চালানো আমাদের কারোরই কাম্য হতে পারে না।

সাঈদী সাহেবের সম্পত্তি সাঈদী সাহেবের। তিনি তার সম্পদ ইচ্ছে করলে কাউকে দান করতে পারেন, বিক্রি করতে পারেন আবার নিজে ব্যবহারও করতে পারেন।

কোন সম্পদ তিনি দান করলে বা বিক্রি করলে স্বত্ত্ব ক্রেতার হয়ে যায়, এটাই স্বতসিদ্ধ কথা।

আপনারা জানেন, আমি নসীম হিজাযীর কিছু বই প্রকাশ করতাম। কাজটা আমি আবেগ থেকেই শুরু করেছিলাম তাঁর অনুমতি না নিয়েই। পরে বিষয়টি আমি তাকে অবহিত করি এবং তাঁর লিখিত অনুমতি চাই। তিনি জবাবে আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, আমার প্রকাশনা তাকে মুগ্ধ করেছে এবং আমি তাঁর যাবতীয় বই প্রকাশ করতে পারি এই শর্তে, আমি অন্য কাউকে অনুবাদে বাঁধা দিতে বা প্রকাশে বাঁধা দিতে পারবো না।

যদি অন্য কেউ প্রকাশ করতে চায় তবে তিনি নতুন করে অনুবাদ করিয়ে প্রকাশ করতে পারবেন কিন্তু আমার দ্বারা অনুবাদকৃত বই হুবহু কেউ প্রকাশ করতে পারবে না। তিনি বলেন, আল্লাহ না করুন, যদি কখনো আপনি নিজে প্রকাশ করতে অসমর্থ হয়ে পড়েন তবু যেন দ্বীনের মহব্বতে আমি যে কাজ করেছি তা চালু থাকে। তবে আপনার দ্বারা অনুবাদকৃত কপির স্বত্ত্ব আপনার। অন্যরা আপনার অনুবাদ প্রকাশ করতে চাইলে আপনার অনুমতি ও চুক্তিবদ্ধ হতে হবে।

আমি তাঁর এ জবাবে যারপরনাই সন্তুষ্ট হই এবং তাঁর দুরদর্শিতায় অবাক হই। তিনি আমাকে যেমন অনুমতি দিলেন তেমনি সবার জন্য তা উন্মুক্তও করে দিলেন। আরো জানিয়ে দিলেন  অনুদিত বইয়ের কোন রয়ালিটি তিনি চান না।

আমি জানিনা, সাঈদী সাহেবের ব্যাপারে কি ঘটেছে। তিনি কি তার সম্পদ দান করেছেন, নাকি বিক্রি করেছেন, নাকি সবার জন্য উন্মুক্ত রেখেছেন। অন্যরা যদি সাঈদী সাহেবের বক্তব্য রেকর্ড করে থাকে তবে সিএইচপির কোন রাইট নাই তা বন্ধ করার। কিন্তু যদি সিএইচপির রেকর্ড করা কপি সিএইচপির অনুমতি ছাড়া কেউ প্রকাশ করে তবে তা হবে বেআইনী। সাঈদী সাহেবের অনুমতি ছাড়া কেউ তা দিয়ে ব্যবসা করলে তা হবে রীতিমত চুরি। ইসলাম প্রচারের স্বার্থে এ চুরি ইসলামও সমর্থন করে না, আইনও সমর্থন করে না। 

যতদিন কোন ব্যক্তি বেঁচে থাকবে ততদিন এ স্বত্ত্ব তিনিই ভোগ করবেন। প্রচলিত আইনে তিনি মারা যাবার পর ৫০ বছর এ স্বত্ত্ব ভোগ করবে তার পরিবার। ৫০ বছর পর তা পাবলিক প্রোপার্টি হয়ে যাবে।

ইসলামের খেদমতের জন্য কোন চুরিকে অনুমোদন দেয়া যায় না।

যদি সিএইচপি সাঈদী সাহেবের কোন ক্যাসেটের স্বত্ত্ব ক্রয় করে থাকে তবে সাঈদী সাহেব মরার পর ৫০ বছর পর্যন্ত সে স্বত্ত্ব তারা ব্যাবহার করতে পারবে। এরপর তা পাবলিক প্রোপার্টি হবে। আর যদি সিএইচপি আগেই তা উন্মুক্ত করে দেয় তবে সেটা হবে তাদের উদারতা।

আমি মনে করি, যারা ব্যক্তির হক মেরে খাচ্ছে তাদেরকে আগে নিয়মের আওতায় আনা উচিত। ভালবাসার কারণে কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। ইসলামের খেদমত করতে হবে ইসলামী নীতিমালা মেনে।

যিনি বা যারাই নীতিমালা লঙ্ঘণ করবে তাদের ব্যাপারে আমাদের কঠোর হতে হবে।

কারণ আমরা জানি, কারো হক নষ্ট করলে সে ব্যক্তি যতক্ষণ মাফ  না করবে আল্লাহও তা মাফ করবেন না।

ইসলামের খেদমতের নামে বক্তা, গীতিকার, সুরকার, শিল্পীর হক যারা নিয়মিত নষ্ট করছে তারা যেমন নিজের অমঙ্গল ডেকে আনছে তেমনি ইসলামেরও ক্ষতি করছে।

এ ব্যাপারে উচিত ইসলামী নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

৩০/৬/২২

কপিরাইট আইন ও কিছু কথা ঃ আসাদ বিন হাফিজ

এসব টেকনিক্যাল বিষয় আমি কম বুঝি। শেয়ার করা মানেইতো অন্যকে দেখার সুযোগ করে দেয়া। সিএইচপি কি শেয়ার করতে নিষেধ করেছে?

যদি না করে থাকে তাহলে তো কোন সমস্যাই থাকে না।

আমি গান লিখি। সুরও করি না, গাইও না, ব্যবসাও করি না। আমি ইউটিউবে গিয়ে দেখি আমার লেখা গান সুর দিয়ে কেউ গাচ্ছে। আমার গান আমি বিক্রি না করলে সেটা অন্যে ব্যবহার করা গর্হিত কাজ।

গানের একাধিক মালিক থাকতে পারে।

প্রথম মালিক গীতিকার

দ্বিতীয় মালিক সুরকার

তৃতীয় মালিক শিল্পী

চতুর্থ মালিক ব্যবসাদার।

অথচ গানের যে ফোকাস অংশ থাকে সেখানে গীতিকারের নাম নেই, কখনো সুরকারের নাম নেই।

কারণ কি? কারণ

গীতিকারের নাম থাকলে উনার প্রাপ্য উনাকে দিতে হবে।

সুরকারের নাম থাকলে উনার প্রাপ্য উনাকে দিতে হবে।

কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা গীতিকারকে সম্মানীতো পরের কথা, তার নামটা পর্যন্ত অমিট করে দেয়।

এটা রীতিমত জালিয়াতি। ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে এ ধরনের জুচ্চোরি বেশ ভালই চলছে। এসব বন্ধ হওয়া দরকার।

আমার ক্ষেতের ফসল না কিনে চুরি করে নিয়ে আপনি বাজারে বিক্রি করবেন, এটা যেমন মেনে নেয়া যায় না, তেমনি একজনের কন্টেন তার অনুমতি না নিয়ে আপনি কপি করে ব্যবসা করবেন এটাও সমর্থন করা যায় না।

সব ধরনের নৈরাজ্য বন্ধ হওয়া দরকার। যার যার প্রাপ্য হক আদায় করা দরকার। এ জন্য আইনী বাধ্যবাদকতার বিকল্প নেই।

আমার শত শত গান ইউটিউবে আছে কিন্তু মাস বা বছরান্তে আমি কোন রয়ালিটি পাই না। আমার পরিবার না খেয়ে থাকবে আর আমার গান নিয়ে কেউ ব্যবসা করবে এটা অমানবিকতা।

আমি ইসলামী জনতার কাছে এর বিচার চাই। আপনার ব্যবসা করতে মন চায়, নিজে গান লিখুন, সুর দেন, গেয়ে যান, ব্যবসা করেন আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু গীতিকারের নাম পর্যন্ত গায়েব করে দেবেন আর কপি রাইটের বিরোধিতা করবেন, তা হয় না। বরং সবার অধিকার রক্ষা পায় এমন কঠোর কপিরাইট আইনের জন্য আমাদের দাবী তোলা দরকার। আন্দোলন করা দরকার। একাট্টা হওয়া দরকার।

আসাদ বিন হাফিজ।

৩০/৬/২২

No comments

Powered by Blogger.