আসাদ বিন হাফিজ এর শীতের ছড়া দশটি

 


আসাদ বিন হাফিজ এর

শীতের ছড়া দশটি

১। কনকনে ঠান্ডায়

হীম হীম আদরে

কুয়াশার চাদরে

কনকনে ঠান্ডায়

কাবু হয় পান্ডায়।

কাবু হয় মোসাহেব

কাবু হয় বড় সাব

কাবু খালি হয় না

চাষাড়ে বুড়ো বাপ।

গরু নিয়ে মাঠে যায়

ডাকে হাঁস আয় আয়

নিজে নেয় কাস্তে

হেঁটে যায় আস্তে।

হেঁটে যায় ফাদারে

কুয়াশার আঁধারে

শীত এলে দাদা রে

কাঁপে দেখ্ গাধা রে।

হীম হীম ঠান্ডায়

নড়ে না সে ডান্ডায়

দাঁত কাঁপে ঠকঠক

নড়ে তবু উজবক।

আগুনের পরশে

নাচে মন হরষে।

বেশী শীত ভালা না

শীত কারো খালা না।

২। শীতের দাওয়াত

আপনেরে দাওয়াত দিলাম

আমার বাড়ি আইসেন

শীতের দিনের রোদের মতো

দন্ত মেলে হাইসেন।

তিলের নাড়ু, মেরা পিঠা পোড়া

আসার সময় সংগে আইনেন থোড়া।

আর আইনেন খেজুরের রস

ভিজা পিঠা খাইবেন।

শ্বশুর বাড়ি যাইবেন।

অনেক মজা পাইবেন।

কেউ করে না দাওয়াত এমন

কয় না পিঠা খান

মায়ের মতো কয় না ডেকে

আয়রে সোনার চান।

হয় না যাওয়া খালার বাড়ি

হয় না খাওয়া পিঠা

কে দিবে রে গরম গরম

ভাঁপা পিঠা মিঠা।

চিতই পিঠা গরুর ভুনা

দেয় না পাতে কেউ

তাইতো আমার হৃদয় জুড়ে

ব্যাথার আউলা ঢেউ।

৩। শীত এলে

শীত এলে

শীতের কথা কইতে হয়

কাঁথা গায়ে লইতে হয়

শীতের জ্বালা সইতে হয়

জামার বোঝা বইতে হয়।

শীত এলে

পিঠা পায়েশ খাইতে হয়

শ্বশুরবাড়ি যাইতে হয়

ঠান্ডাজলে নাইতে হয়

শীতের গান গাইতে হয়।

শীত এলে

খেজুর গুড় দেখতে হয়

শীতের কথা লেখতে হয়

ঠান্ডা পাও সেঁকতে হয়

দরকার হলে বেঁকতে হয়।

শীত এলে

শীত এলে জিত নাই

গা ঠকঠক গীত গাই।

৪। বাড়তি জামা বিলাও

শীত এসে গীত গায়-- কন কন কন

কই গেলা আমলা ও সুদী মহাজন।

আমলারা ঘুষ খায়, মহাজনে জুস

বড়লোক চাল পায় গরীবেরা তুষ।

তুমি পরো দাস্তানা, ক্যাপ, মাফলার

গায়ে দাও কোট,শাল, নীল জাম্পার।

তারপর ঢুকে যাও -- কম্বল ও লেপে

তবু শীত তোমাকেই ধরে নাকি চেপে।

গরীবেরা পাটি পেতে কাঁথা গায়ে শোয়

জলে নেমে মাছ ধরে, ক্ষেতে ধান রোয়।

নেই তার কোট টাই, জাম্পার ও দাস্তানা

দালানের দ-ও নাই, কুঁড়েঘরই আস্তানা।

শীতে খাও তাজাতাজা তুমি নানা সবজি

কুয়াশায় ভিজে কাঁদে গরীবের কবজি।

ভেবে দেখো ওদেরও কাপড়ের দরকার

তবু কেউ দেখেনা ,না তুমি, না সরকার।

ঘরে ঘরে পড়ে আছে কত জামা তোমাদের

আলমারি ভরা জামা সীমা আর সোমাদের

ওদেরতো জামা নেই, খালি গায়ে থাকে

ঠকঠক কাঁপে আর আল্লাহকে ডাকে।

বাড়তি জামাটা সোনা দাও না তাদের

এ শীতে গা ঢাকার জামা নেই যাদের।

৫। গরীবের শীত

শীত আসে জিত লয়ে

জিতে যায় গরীবে

বাবু সাব চিত হয়ে

ভাবে সেকি করিবে।

হীম হীম ঠান্ডায়

কাবু হয় পান্ডায়

কাশ্মীরি শাল গায়ে

হু হু করে কান্দে।

বাবু পরে জাম্পার

শীত পড়ে বাম্পার

বলে কই যদু মধু

শীতটারে বান দে।

হু হু একি ঠান্ডা

বরফের আন্ডা

জলদি দে রে বাপ লেপটা

আর দে, পশমী ক্যাপটা।

গরীবের লেপ নাই

পশমের ক্যাপ নাই

গামছাটা কোমরে পেড়ে আনে রস

বলে তোরা রস খাবি, চুপ করে বস্।

রস খায়

যশ পায়

জিতে যায় গরীবে

বাবু বলে, দেখবি, এইবার মরিবে।

ধুর, ওরা মরে না, নেমে যায় কর্মে

ওরা থাকে কর্মে, বাবু থাকে ঘর মে।

এইসব দেখে শীত মরে যায় শরমে।

৬। শীত এলে গীত গাও

শীত এলে গীত গাও

পিঠা আর পুলি খাও

চলো যাই ঘুরিফিরি পার্কে।

দুদিনের এ দুনিয়ায়

কতকিছু শুনি হায়

মরে গেলে কে বলো, কার কে?

মনটাকে ঢেকে রাখো আদরে

হীম হীম কুয়াশার চাদরে।

খুঁজে নাও লেপ কাঁথা বস্ত্র

এগুলোই শীত এলে অস্ত্র।

বিকেলের মিঠে রোদ আস্তে

বলে ঢোকো কম্বলে, ভাস্তে।

শীত এলে গীত গাও

ঢেকে রাখো হাত পাও

নয় তুমি কাবু হবে শীতে।

হেরে গেলে দোষ নাই

লেগে যদি থাকো ভাই

দেখবে, তুমিই যাবে জিতে।

শীত এলে গীত গাও

খেজুরের রস খাও

আত্মীয় বাড়ি যাও বেড়াতে।

শীতটা তো আসবেই

বুড়ো দাদু কাশবেই

ভাগ্যটা কে কবে

পারে বলো ফেরাতে।

৭। শীত বুড়ি

শীত বুড়ি তিন কুড়ি কাঁথা দিয়ে গায়

চরপাড়া গিয়ে ডাকে আয় ওরে আয়।

বরফের লেপ কাঁথা দিতে আমি পারি

আরো আছে বরফের জাম্পার শাড়ি।

আর আছে কুয়াশার মিহিদানা চাদর

আর আছে ওম হীন হিমহিম আদর।

বরফের ভাত দেবো, বরফের রুটি

বরফের চকলেট দেবো শত কোটি।

নগরের মোড়ে মোড়ে বরফের বাতি

থাকবে না এই দেশে আঁধিয়ারা রাতি।

ঘোড়াশালে ঘোড়া নাই টিটিপাড়া টিটি

শীত এলে কই যায় এতো গিরগিটি?

শীত বুড়ি খায় মুড়ি শুয়ে শুয়ে ভাবে

শীত ছাড়া মজাদার পিঠা কই পাবে।

কই পাবে কুয়াশায় ধুয়ে রাখা মুলা

কই পাবে মাছ যাতে ভরে যায় ডুলা।

শীত বুড়ি সুড়সুড়ি দেয় আর বলে

কই পাবি রস তুই শীত চলে গেলে।

৮। শীতের পিঠা

নশো টাকার মিষ্টি কিনে গেলাম শ্বশুরবাড়ি

গিয়ে দেখি শাশুড়ি মার শূন্য দইয়ের হাঁড়ি।

টেবিল জুড়ে শীতের পিঠা কাড়ি কাড়ি বসা

কতক আছে শুকনো আর কতক রসারসা।

বউ পরেছে লাল টুকটুক বিয়ের দিনের শাড়ি

বলে,তোমার সামনে এটা পরতেও সুখ ভারি।

মনের সুখে তাই সেজেছে মায়েের মেয়ে খুব

তার সে রূপের গাঙে যেনো দিতে পারি ডুর।

শীতের পিঠা মিঠা মিঠা, শাশুড়ি দেন বেড়ে

শালা বলে, তোমার জন্য রস এনেছি পেড়ে।

শাশুড়িমা বলেন, বাবা, ভাঁপা পিঠা নাও

রসের পরে ভাঁপা পিঠা গরম গরম খাও।

আমি বলি, আম্মা আপনার অনেক কষ্ট হলো

আম্মা বলেন, জামাই বাপু কি যে এসব বলো!

ছেলের জন্য মায়ের কষ্ট, কষ্ট তো নয় সুখ

কষ্ট পালায় দেখলে ছেলের সদা হাসি মুখ।

৯। হীম কুয়াশা হীম হীম

হীম কুয়াশা, হীম হীম

মুরগী দিল হাঁসের ডিম

বৃষ্টি আসে ঝিম ঝিম

হীম কুয়াশা, হীম হীম।

হীম কুয়াশা, হীম হীম

রিম ঝিমাঝিম, ঝিম ঝিম

রিম ঝিমাঝিম, ঝিম ঝিম।

হীম কুয়াশা, হীম হীম।

কাঁপছে বসে শীতের বুড়ি

শীত নামছে গুড়ি গুড়ি

বলল নে খা, পাথর নুড়ি

রিম ঝিমাঝিম, ঝিম ঝিম

হীম কুয়াশা, হীম হীম।

হীম কুয়াশা, হীম হীম

তারার আকাশ টিম টিম।

বাতাস বয় রে কনকন

ডালিম ঘোরে বনবন

হীম কুয়াশা, হীম হীম

রিম ঝিমাঝিম, ঝিম ঝিম

হীম কুয়াশা, হীম হীম।

১০ আলোর মিছিল ছুটবেই

রাত্রি গভীর নিকষ আঁধার

সূর্য তবু উঠবেই

শীত সকালে হীম কুয়াশা

গোলাপ তবু ফুটবেই।

ফুলের সুবাস ছুটবেই

ঘুম মানুষের টুটবেই

মিলা শীলা বনভোজনে

আবার এসে জুটবেই।

শীত কুয়াশা টুটবেই

আলোর মিছিল ছুটবেই

ঘুমে যারা ছিল তারা

আবার জেগে উঠবেই।

শীত সকালে হীম কুয়াশা

গোলাপ তবু ফুটবেই।

ঘুমিয়ে থাকা ফুলকলিরা

রাজপথে ফের জুটবেই।

আলোর মিছিল ছুটবেই।

No comments

Powered by Blogger.