টুকরো গদ্যঃ নাম ও দাড়ি বিভ্রাট
নাম ও দাড়ি বিভ্রাটঃ আসাদ বিন হাফিজ
আমার
বুদ্ধি এতো কম যে, মাঝে মাঝে মনে হলে নিজেই
হেসে উঠি। একবার এক লোকের নামের সাথে পীর লাগানো দেখে ভাবলাম, আহা, কত নূরানী না জানি তার চেহারা। চোখে হয়তো গাঢ় করে সুরমা
দেয়া। মাথায় পাগড়ি, গায়ে আতরের ভুর ভুর গন্ধ।
কিন্তু খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি, তিনি একজন ক্লিনসেভড
প্রগতিশীল লোক। অধিকাংশ সময় টাই প্যান্ট পড়েন। আল্লাহতেও বিশ্বাস নেই। যাকে বলে
পাড়নাস্তিক। লোকটার নাম পীর আসহাবুর রহমান। ভাগ্য ভাল যে, আমি তার মুরীদ হতে যাইনি।
আরেকবারের
ঘটনা। এক বিয়ের অনুষ্ঠানে দাওয়াত খেতে গেলাম। অনুষ্ঠান ছিল এক তরুণ কবির। টেবিলে
আমার উল্টোপাশে বসেছিলেন এক জবরদস্ত হুজুর। লম্বা দাড়ি, সফেদ পাঞ্জাবী। অবশ্য মাথায় টুপী নেই। ভাবলাম,
খাওয়ার সময় টুপী ঝামেলা
করতে পারে ভেবে পকেটে ঢুকিয়ে নিয়েছেন।
আমরা
খাচ্ছি। ভদ্রলোকের লম্বা দাড়িতে ঝোল লাগার ভয়ে তিনি খুব সাবধানে খাচ্ছেন। আমার পাশে বসা যে লোক, তিনি পলিটিশিয়ান। কানের
কাছে মুখ এনে বললেন, হুজুরকেতো চিনলাম না।
এমন
সময় তদারক করতে করতে সেই তরুণ কবি আমাদের টেবিলে এসে হাজির। বললেন, সরি, গুনদা, আরেক পিছ রান নেন। এটা আমার
তরফ থেকে।
গুনদা
শুনতেই মনে পড়ে গেল পত্রিকায় দেখেছি ওনার ছবি। উনি বিখ্যাত কবি নির্মলেন্দু গুন।
কথাটা আমার বন্ধুও শুনলো।
খাওয়ার
পর গল্প করছি সোফায় বসে। বন্ধু বললো, বুঝলি, হুজুরকে দেখার পরই আমার কেমন অস্বস্তি হচ্ছিল। ভাবছিলাম, কোন জঙ্গী নেতা নাতো? কেমন বড় বড় মোচ।
আমি
বললাম, তোদের এই এক দোষ। দাড়ি দেখলেই ভাবিস জঙ্গী। সে কাচুমাচু হয়ে
বললো, সবাইতো তাই ভাবে।
তাহলে
আসাদুজ্জামান নূরকেও তো জঙ্গী বলতে হবে। তখনি ঘটনাটা মনে পড়লো।
একবার
কবি ব'নজীর আহমদের চকবাজারের বাসায় বসে আছি। কবির মেয়ে আমাদের
চা-নাস্তা দিচ্ছে। গল্প করছেন কবি।
একবারের
ঘটনা। পাক আর্মি কবির বাসা ঘেরাও করেছে। সবাই ভয়ে অস্থির। পাক আর্মি জিজ্ঞেস করলো, তুম মুসলিম হো?
সত্যি
সেলুকাস। কি বিচিত্র বাংলাদেশ।
৪ঠা আগষ্ট ২০২২; বাদ জোহর
No comments