রাজনীতির চিত্তাকর্ষক খেলা - আসাদ বিন হাফিজ
আমি রাজনীতি নিয়ে তেমন কথা
বলি না, কারণ আমি রাজনীতির ছাত্র নই, রাজনৈতিক নেতা নই, রাজনীতির বিশ্লেষকও নই। তবে আমি অন্ধ
নই, চোখ খুলে দেখি রাজনীতির বিচিত্র খেলা। মুখ ফসকে কখনো কিছু
বলে ফেললে ভাববেন কবির খেয়াল। কারণ এখনো আমি কবিতাই লিখি।
১০ জুন ২০২৩। বাংলাদেশের রাজনীতিতে
একটি চিত্তাকর্ষক খেলা হয়ে গেল। খেলা দেখে আনন্দ পাননি এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে।
একই খেলায় দুপক্ষ কেমন করে জেতে তার একটি বিস্ময়কর নমূনা ছিল এ খেলা। খেলার এক পক্ষে
ছিল সরকার, অপর পক্ষে জামায়াতে ইসলামী। দিন শেষে দেখা গেল
দুপক্ষই চরম আনন্দিত ও পুলকিত। এমনকি দর্শক পর্যন্ত। ঘটনাটা টক অব দ্যা টাউন থেকে টক
অব দ্যা কান্ট্রি হয়ে টক অব দ্যা ওয়ার্ল্ড হয়ে গেল।
আমেরিকার ভিসা নীতির কারণে
সরকার পড়েছে মাইনকা চিপায়। দেশ গনতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই,
ভোটাধিকার নেই বলে তারা ভিসা নীতি প্রয়োগ করে যে চাপ সৃষ্টি করলো,
সেখানে সরকারের প্রমাণ করা দরকার হয়ে পড়লো, এসব
অভিযোগ ডাহা মিথ্যা। এটা প্রমাণকরে করার জন্য
বিরোধী দলের মত প্রকাশে সরকার যে বাঁধা দেয় না ১০ জুনের সমাবেশ তাই প্রমাণ করলো। সরকার
বিশ্বকে দেখিয়ে দিল জামায়াতের মত জানি দুশমনকেও তারা অবাধে সমাবেশ করতে দেয়। ফলে,
এ সমাবেশ সরকারেরই বিজয় ঘোষণা করলো।
জামায়াত এ পরিস্থিতিকে চমৎকারভাবে
ক্যাশ করলো। আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নিঃশ্বেষ করার এমন কোন চেষ্টা বাকী রাখে নাই, যা তাদের পক্ষে করা সম্ভব। তারা জামায়াতের প্রথম সারির সব নেতাকে ফাঁসি দিয়ে
দিল। দ্বিতীয় সারির নেতাদের জেলে ঢুকিয়ে দিল, তৃতীয় সারির নেতারা
পলাতক। মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা জেলে। কাউকে গুম করলো, শত শত কর্মীকে
পঙ্গু করে দিল যাতে তারা আর জামায়াতের পক্ষে দাঁড়াতে না পারে। সারাদেশে জামায়াতের সব
অফিসে তালা লাগিয়ে দিল। ব্যবসা বাণিজ্য দখল করে নিল। ভাবলো জামায়াত শেষ। তাদের সকল
ধরনের সভাসমাবেশ করার অধিকার কেড়ে নিল। ইফতার মাহফিল, তারাবীর
মত ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে জামায়াত কর্মীদের গ্রেফতার করলো, বিয়ের
মত সামাজিক অনুষ্ঠানও তারা নিরাপদে করতে পারছে না। নিজের বাসায় ঘুমাতে পারছে না,
এমনি এক দুঃসহ অবস্থা।
ভিসানীতি তাদের জন্য বয়ে নিয়ে
এলো এক অভাবিত সুযোগ। অন্য কেউ এ সুযোগ নেয়ার আগেই জামায়াত সমাবেশ ডেকে বসলো। সরকার
পড়লো বিপাকে। যে জামায়াতকে দীর্ঘ দশ বছর মাঠে নামতে দেয়নি সরকার, সে সরকার পড়ে গেল মাইনকা চিপায়। যদি সমাবেশ করতে না দেয় তাহলে প্রমাণ হয়ে যাবে
দেশে গনতন্ত্র নাই, তালা মেরে রাখা হয়েছে বিরোধীকন্ঠ। আর যদি
সমাবেশ করতে দেয়া হয় তাহলে জিতে যায় জামায়াত। সরকারের এতো অত্যাচার, নিপীড়নকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে রাজনীতি মাঠে ফিরে আসে জামায়াত।
নানা নাটকের পর নতি স্বীকার
করে সরকার। জামায়াতকে সমাবেশ করার অনুমতি দিতে বাধ্য হয়। এ ছিল এক অবিস্মরণীয় বিজয়।
মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে তারা
যে সমাবেশ করেছে এটাও ছিল অকল্পনীয়। জামায়াত নয়, ঢাকার রাস্তায়
নেমে এসেছিল বিক্ষুব্ধ জনতা। এটা ছিল এক গণবিস্ফোরণের স্টার্টিং পয়েন্ট। সরকারের জুলুম
নিপীড়ন জামায়াতকে কতটা জনগণের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে এটা জামায়াত তো বটেই, পুরো বিশ্বও অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করেছে।
এ অর্জন জামায়াতকে আরো সাহসী
প্রোগ্রাম নিতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। সপ্তাহ কাল পেরিয়ে গেছে, কিন্তু আলোচনা পর্যালোচনা ক্রমে আরো ছড়িয়ে যাচ্ছে।
যারা এ প্রোগ্রামে আঁতাতের
গন্ধ পাচ্ছেন তাদের বলি, আঁতাত নয়, রাজনীতির চালে
বরং জামায়াত এক ধাপ এগিয়ে গেছে। ভিসানীতির কারণে মাইনকা চিপায় পড়া আওয়ামী লীগ থেকে
ঠিকই তারা তাদের পাওনা বুঝে নেয়া শুরু করেছে।
তাদের আরো অর্জন, তারা আওয়ামী মন্ত্রীদের মুখ দিয়ে বলতে বাধ্য করেছে, "আদালতের রায়ের আগে জামায়াতকে দোষী বলা যাবে না।" তাহলে নির্দোষ জামায়াতকে যে জুলুম, নির্যাতন করা হয়েছে,
অফিস বন্ধ করে দিয়েছে, কর্মীদের হত্যা,
গুম ও পঙ্গু করা হয়েছে এর খেসারত কে দেবে? এসব
প্রশ্নের কি উত্তর দেবেন মন্ত্রীগণ।
জামায়াত আকস্মিক এ সুযোগে
যা অর্জন করলো বিএনপি ও অন্য কোন দল তা ক্যাশ করতে পারেনি। জামায়াতের এ স্মার্টনেস
আবারো প্রমাণ করলো, এদেশের রাজনীতিতে জামায়াত অপরিহার্য। দেশের
রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা, দক্ষতা ও প্রজ্ঞা জামায়াতেরই
আছে। জামায়াতের আমীর গোলাম আযমের কেয়ারটেকার ফর্মুলা গ্রহণ করে জাতি যেমন অনিবার্য
ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিল, আবারো কি তেমন কোন ধ্বংসযজ্ঞ
থেকে জাতিকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ জামায়াতকে বেছে নিয়েছেন? জামায়াতের
আগামী দিনের রাজনীতিই সেটা বলে দেবে।
১৭/৬/২৩। বাদ আসর।
No comments