একটি অন্যরকম গল্প - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ১১৫

                                                                                

কবিতা-১১৫ : একটি অন্যরকম গল্প

আমরা এক ভয়ানক দুঃসপ্নের ভেতর দিয়ে পাড়ি দিচ্ছিলাম মহাকালের ক্রুদ্ধ রজনী। ভেবেছিলাম, রাত শেষে নবীন আলো এসে চুম্বন করবে মানবতার পদযুগল।

কিন্তু আমরা রাতের পর রাত পেরিয়েও কোন আলোর দেখা পেলাম না।

 

দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে যেমন একটার পর একটা পর্বত অতিক্রম করতে হয়, এও তেমনি।

আমরা ক্রমাগত রজনীর পর রজনী পার হয়ে যাচ্ছি আলোহীন দুঃখ জাগানিয়া রাতের হাত ধরে।

 

একসময় নীলাভ্র মরু বাঘ এসে গ্রাস করলো আমাদের। আমি বললাম, এ আবার কি?

জবাব এলো, তোমাদের দয়ালু প্রভু তোমাদের দুর্দশা দেখে আমাকে পাঠিয়ে দিলেন। বলে দিলেন, যা, আমার বান্দাদের সাবধান কর।

তারা যেন নিজেরা আত্মহত্যা না করে।

প্রভু বলেছেন, আমি তাদের কাছে পাঠিয়েছি, আমার নির্ভুল হুকুমনামা। আমার হাবীব সেই হুকুমনামা বান্দার কাছে রেখে এসেছেন কোরআনের পবিত্র পাতায়।

 

আমি বললাম, সেটা আমরা জানি। আমরা সে কোরআনকে শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। অত্যন্ত তাজিমের সাথে আমরা তা তাকের ওপর তুলে রাখি। এখন অবশ্য অনেকের ঘরেই তাক নেই। তাদের ঘরে ঝাড়বাতির নিচে শোভা পাচ্ছে শোকেস। সেই শোকেসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে পবিত্র এই কোরআন।

 

আমার কথায় একটু হাসলেন আগন্তুক। হাসিটা আঙুরের মত ঠোঁটে ঝুলিয়ে রেখে বললেন, ওরে মুর্খ মানব, কোরআন কি এ জন্য দেয়া হয়েছে? ওতে আছে স্রষ্টার হুকুমনামা। মানুষ হিসাবে কি কাজ তুমি করতে পারবে না, আর কি কাজ করতে হবে সেইসব নিষেধাজ্ঞা ও হুকুম। সে হুকুম তোমার মানতেই হবে।

 

আমি বললাম, মানি তো।  কোরআনের হুকুম মেনে আমরা নামাজ পড়ি, রোযা করি, হজ্জে যাই, আরো কত কি?

 

আবারো হাসলেন তিনি। বললেন, হুকুম মানার মাধ্যমে তুমি কিছু পূণ্য হাসিল করো, এতে তোমার লাভ হতে পারে, কিন্তু আল্লাহ ও বান্দার কি লাভ হয়?

কিন্তু যদি নিষেধাজ্ঞা মানো তাতে তোমার লাভের সাথে জমা হয় বান্দার লাভ।

 

বুঝলাম। কিন্তু আপনি কে?

কেন আমাকে এসব বলছেন? বললাম আমি।

 

হে আল্লাহর প্রিয়তম সৃষ্টি বনি আদম। আমার নাম করোনা। কোন্ কোন্ কাজ করতে মানা, আমি শুধু এই কথাটাই তোমাকে বলতে এসেছি। এটা করো না, ওটা করো না। ব্যস।

 

যেমন?

যেমন তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে করো না। আল্লাহর সিফাত জানো ও মানো।

আমি বললাম, আমরাতো তাই মানি।

এবার ক্ষেপে গেলেন করোনা। বললেন, তুমি কি জানো ভন্ড কাকে বলে?

বললাম, প্রতারক ও মোনাফিককে।

তাহলে বলো, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক কে?

আমি বললাম, আল্লাহ।

তাহলে তুমি কোন সাহসে সংবিধানে লিখে রেখেছো, জনগণ?

যে মানুষ আল্লাহর হুকুম ছাড়া একটা পশমও নিজের বশে রাখতে পারে না, সে হবে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক?

 

আমি চুপ করে রইলাম। তিনি বলছেন, মানুষ কার কাছে মাথা নত করবে, কাকে ভয় করবে?

কে মানুষের ভালমন্দ করার ক্ষমতা রাখে?

 

আমি অকপটে বল্লাম, আল্লাহ।

তিনি বললেন, কিন্তু মানুষ কাকে ভয় করে?

তারা নানা শক্তির কাছে মাথা নত করে। তারা মনে করে, আমেরিকাই সব ক্ষমতার মালিক। কই, আমেরিকার সে দম্ভ?

এত এত পারমানবিক অস্ত্রের মালিক কার ভয়ে মুখ ঢেকে লুকিয়ে আছে হেরেমের অন্দরে?

 

আমি বললাম, বুঝলাম, আল্লাহই সমগ্র বিশ্বজাহানের একক মালিক। দ্যান?

 

দ্যান। কারো ওপর জুলুম ও অত্যাচার করো না। জুলুম করার তুমি কে? আল্লাহ কি রাজাকে ফকির ও ফকিরকে রাজা বানাননি?

তবে কিসের দম্ভ তোমার?

তুমি কার ওপর জুলুম করছো?

যে মহান প্রভুর দয়ায় আজো বেঁচে আছো, সেই তুমি পরম প্রভুর আদরের সৃষ্টির ওপর জুলুম করছে? সাহস তো তোমার কম নয়?

ভেবে দেখেছো, তিনি যদি এর বদলা নিতে চান, তোমার অবস্থা কি হবে? নাদান, মূর্খ কোথাকার।

 

আমি আবারও মাথা নিচু করলাম। করোনা বললো, মাথা নিচু করলে কেনো? তুমি তোমার অফিসকক্ষ লাগোয়া বিশ্রাম কক্ষে কাকে দিয়ে পা টেপাও? পরকিয়া করে কে? কে যায় অভিজাত হোটেলে?

অথচ তোমার প্রভু, বার বার বলেছেন অশ্লীলতার ধারেকাছেও যেয়ো না। এই তোমার ধারেকাছে না যাওয়া? কাপড় পরার ভদ্রতা ছেড়ে তুমি দুটুকরো ত্যানা পেঁচিয়ে নিজেকে সভ্য না অসভ্য বানাচ্ছো?

 

আমি লা-জবাব। তিনি বললেন, তোমাদের হারাম খেতে নিষেধ করা হয়েছে। অথচ তোমাদের চোখ সারাদিন হারামের দিকেই পড়ে থাকে। হারাম ইনকাম, হারাম খাবার, এতীমের মালভক্ষণ, রাজকোষ লুটপাট, কোনটা তোমরা করো না? তাই বলছি, বাঁচতে হলে এসব বাদ দাও।

 

আমি কাচুমাচু হয়ে বললাম, তাহলে আমাদের এখন কি করা উচিত?

তিনি বললেন, আগে কোরআন খোল। উল্টাও পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা।

টুকে নাও নিষেধাজ্ঞা, টুকে নাও আল্লাহর হুকুম।

তারপর একটু একটু করে এগিয়ে যাও সে পথে।

 

মানুষের কোন ক্ষমতা নেই।

সব ক্ষমতার মালিকই আল্লাহ।

তোমার মত আমিও তাঁরই হুকুমের দাস। আমার কোন ক্ষমতা নেই মচনুষকে মারার। আমি শুধু আল্লাহরই হুকুমের তাবেদার।

 

তোমার যদি কিছু বলার থাকে তোমার প্রভুকে বলো।

যা মানুষের অনিষ্ট করে তাই পাপ। পাপ করা বন্ধ করো।

 

আমি এর সব কথাই মহাকালের যাত্রীদের খুলে বললাম। কিন্তু কে আমার কথা বুঝলো, আর কে বুঝলো না আমি অন্ধকারে কিছুই দেখতে পেলাম না। মনে হলো, কেউ কেউ আমার কথা বিশ্বাস করেছে, তবে অধিকাংশই করেছে অবিশ্বাস।

 

আমি এই অবিশ্বাসী জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যত ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়লাম।

২১/০৬/২০২০ ১০টা

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.