প্রেমান্ধ মৌমাছি চোখ - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ১১৪
কবিতা-১১৪ :
প্রেমান্ধ মৌমাছি চোখ
চোখকে বললাম, বাড়ি যা, সবকিছু
দেখতে হয় না।
সবাই সবকিছু দেখতে পারেও না।
আগে দেখা শিখতে হয়। তারপর দেখতে
হয়।
দেখতে হলে দেখার যন্ত্রপাতি আগে
সচল করতে হয়।
সব বনে হরিণ থাকে না।
সব মনে ভালবাসা থাকে না।
মনের ভেতর মন থাকে, বনের ভেতর
বন।
যদি দেখতে চাও, মস্তিষ্ককে
বলো,
সাবধান, দেখার
জন্য তৈরি হও।
হৃদয়কে বলো, রানীমা, উঠুন, দেখুন, এই
পুষ্পের ভেতর মধু আছে।
চোখকে বলতে হয়, চোখ, গেট
খুলে দে।
তাকা সামনের দিকে। দেখ এ জীবন
মধুময়।
তুমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললে,
কই মধু, আমি তো
কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।
না মধু, না
মৌচাক!
এই তোমাদের সমস্যা, দেখার
জন্য যে মনকে পাঠাবে তার ভেতর ভালবাসা ভরে দাও।
ওটা ছাড়া কিছুই দেখা যায় না।
ফুলের ভেতর জমানো মধু দেখতে হলে
মধুপোকা হও।
এই যে অবারিত সর্ষে ফুলে ভরা মাঠ,
গাছে গাছে হৃদয়কাড়া হলুদ ফুল,
এই প্রত্যেকটি ফুলের মধ্যে
মধুভান্ডার জমা করে রাখা হয়েছে।
তুমি দেখতে পাও না, সে দোষ
কি ফুলের, না মধুর?
অথচ ফুলের মধু চুষে চুষে খাচ্ছে
যে মধুপোকা, ওকে জিজ্ঞেস করে দেখো,
সে শত মাইল দূর থেকে এখানে এসেছে শুধু মধু খাবে বলে।
আফসোস, একটা
মৌমাছির ভালবাসাও তুমি তোমার অন্তরে জন্ম দিতে পারোনি। এ জন্য কোনদিন পুঁতে দাওনি
একটি সর্ষে দানা। আয়ত্ব করতে পারোনি, মৌমাছির মত ভালবাসা মন। চোখের
সামনে শত শত মধুভান্ডার জমা হয়ে আছে, কিন্তু তুমি কিছুই দেখতে পাচ্ছো
না হতভাগা নাদান কোথাকার।
তোমার প্রভুর কাছে কোনদিন চেয়েছো
কি একটি প্রীতিপূর্ণ চোখ?
বাড়ি যাও, প্রভুকে
বলো, হে প্রভু, আমাকে এমন একটি চোখ দাও,
যে মন্দ দেখতে অভ্যস্ত নয়।
সে যেদিকে তাকায় দেখে থরে থরে
কল্যাণ ও ভালবাসায় অন্তর ভরা জগতসংসার।
এ জগতে কোন দুঃখ নেই।
অসুন্দর নেই। অকল্যান নেই।
আছে পুকুরভরা মাছের মত প্রেমভরা
মন।
হরিণের চোখের মত মাঠ জুড়ে শুয়ে আছে
জ্বলন্ত জোড়া চোখ।
মনে হয়, মাঠে
মাঠে শুয়ে আছে তারার মেলা।
যাও, বাড়ি
যাও।
পৃথিবী সীমাহীন এক সুন্দরের
রাজ্য। এই সুন্দর দেখার জন্য চাই শুধু একজোড়া প্রেমান্ধ মৌমাছি চোখ।
১৯/০৬/২০২০ ৫টা
অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
No comments