পুষ্পপরাগ - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ৪৪২

 

কবিতা-৪৪২ : পুষ্পপরাগ

তোমার পটলচেরা চাহনীতে বিদ্ধ হলো আমার হৃদয়। আমি কাটা মুরগীর মতো ছটফট করতে থাকলাম। ভাবলাম, কি নির্দয় নিষ্ঠুরতা। অই চোখের দিকে তাকানোর সময় কি আমার আছে? আমাকে তো এখনি মিছিলে যেতে হবে।

 

তখনি মনে হলো, আমার যদি দুটো চোখ না থাকতো? তবে তোমার আহবানপূর্ণ নয়ন আমাকে

বিদ্ধ করতো হতো না।

দেখতে হতো না বিপর্যয়ের আজদাহা।

মিছিলে যাওয়ার জন্য আমাকে ডাকতো না প্রাণের বন্ধু।

মানুষের মন লোভে, হিংসায় কি পরিমান কদর্য হতে পারে তাও দেখতে হতো না।

 

যদি কান না থাকতো গাধার কর্কশ ধ্বনি প্রবেশ করতো না আমার কর্ণকুহরে। নাক না থাকলে স্বৈরাচারের দুর্গন্ধে বন্ধ হতো না নাসারন্ধ্র।

যদি জন্মই না হতো, এই বিশ্রী পৃথিবীর রূপ দেখে কেঁদে উঠতো না মায়াময় কোমল হৃদয়।

 

হায়, মানুষকে প্রভু বানিয়েছিলেন গোলাপের ঘ্রাণ নিতে, এখন তারা পড়ে আছে বিবর্ণ ডাস্টবিনে।

সৌগন্ধ আতর ও প্লাবিত জোসনার কি দরকার ছিল আমাদের। আমরাতো মানুষ নই, জোঁকের কালসিটে পিঠের সৌন্দর্যেই বিমোহিত হতে পারতাম।

 

এই দ্বিপ্রহরে উত্তপ্ত রোদের মাঝে যে মানুষ ঘুমোতে পারে অনায়াসে, তাদের জন্য হরিণ ও হরিণের নাভীর নিচের কস্তুরীর ঘ্রাণ কি খুব দরকার ছিল?

 

এই বজ্রপাত, বাতাসের এই তুমুল গর্জন, সাগরের কল্লোল, এসব রেখে গাধার চিৎকার শোনার জন্য আমার কি দুটি কান সত্যি দরকার ছিল? আমাকে সর্ষে ফুলের উন্মাতাল জাজিম রেখে কেন এই স্বৈরাচারের তাড়া খেয়ে ফিরতে হবে?

 

এর চেয়ে এই মায়াময় চোখ, কোকিলের সুমিষ্ট গান, জমজমের পানি আর পারস্যের আতরদানী দিলে আমি কি সেজদায় লুটিয়ে পড়ার জন্য আরেকটু বেশী সময় পেতাম না? তবে স্বৈরাচারের ডান্ডাবেরির কি দরকার ছিল মালিক?

 

এই কর্কশতার পরিবর্তে আমাকে দাও পুষ্পপরাগ ও রিনিঝিনি গান।

আমাকে দাও বেহেশতী কুসুম কানন।

আমাকে দাও আন্দোলিত হৃদয়ের অবারিত মৌতাত। দাও ভালবাসাপূর্ণ হৃদয়ের অনিশেষ সুঘ্রাণ।

১১ই জানুয়ারী ২০২৪; বাদ জোহর।

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.