কবিরা এভাবেই অদৃশ্য হয় - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ৪১১

                 

কবিতা-৪১১ : কবিরা এভাবেই অদৃশ্য হয়

অন্ধকার রাতের চেয়ে ইদানিং দিনগুলো আমার কাছে অধিক অন্ধকারময় মনে হয়। যেদিকে তাকাই আমার আমিকে আর কোথাও দেখি না। দেখি চাপ চাপ অমাবস্যা। অন্ধকার ঘাপটি মেরে আছে নীল দুটো চোখের সামনে।

 

মনে হয় আমি বলে কেউ নেই এ পৃথিবীতে। যখন ছিলাম আমার প্রচুর বন্ধু ছিল। আত্মীয় পরিজন ছিল। আমি তখন আনন্দ সাগরে ভাসতে ভাসতে কবিতা লিখতাম। পত্রিকার সম্পাদকরা সে কবিতা ছাপতো। চিঠি লিখতো কবিতা চেয়ে। তারপর ফোন এলোকবিতা চাইতো ফোনে। বাসায় লোক পাঠাতো কবিতার জন্য।

 

ইদানিং ওরাও জেনে গেছে আমি মারা গেছি। তাইকেউ আর লেখা চেয়ে তাগাদা দেয় না। বন্ধুরা বাসায় আসে না। নাকি আমারই ভুলনেট সংস্কৃতির যুগে এখন আর পত্রিকাই বের হয় না?

 

রাতের চেয়ে দিন এখন অন্ধকারে পরিপূর্ণ। রাতে ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে ছুটে যাই আনন্দ নগরে। প্রাণ ভরে দেখি অনিন্দ্য সুন্দর। দেখি অপার্থিব মায়ার ভুবন। দেখি পুষ্পের হাসি ও প্রজাপতির ওড়াউড়ি। দেখি শৈশবের লুকোচুরি খেলা। গভীর রাতে অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে যাই প্রেমঘরে।

 

কিন্তু আঁধার সরে গেলেই আসে দিন। অদৃশ্য দেহকাঠামো জলের ওপর ভাসতে থাকে মরা মাছের মত। সেই মাছ ঠুকরে খায় দানব পোকা। আমার আর কোথাও পালানো হয় না। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাই। ওরা আমাকে গুম করে পাঠিয়ে দেয় আয়নাঘরে।

 

তখন দিন হয় রাতের অধিক রাত। সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে লুকিয়ে পড়ি শামুকের মত। আমাকে হত্যা করার জন্য লোকালয়ে ঘুরে বেড়ায় অদৃশ্য আততায়ী। কোথাও পায় না আমাকে।

 

যে আমি নিজেই আমাকে দেখি নাতাঁকে খুঁজে পায় সাধ্য কারসম্পাদকরা তাই আমাকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে ভাবে তবে কি কবি হরিয়াল দ্বীপে অদৃশ্য হলো?

 

আহারে! কবি না বলেই মারা গেল। আমাদের একটা শোকসভা করার সুযোগও দিল না?

কবিরা এভাবেই অদৃশ্য হয়ে যায়। পত্রিকার পাতায় তার মৃত্যু সংবাদও ছাপা হয়নাকবিতা ছাপা হবে কি করে?

 ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০২৩; বাদ জুমা।

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.