আমি শিল্পী বা অনুবাদক না : আসাদ বিন হাফিজ
আমি শিল্পী বা অনুবাদক না : আসাদ বিন হাফিজ
ইদানিং বিশেষণ বিতরণের ঘটা চলছে। ইতোমধ্যে এমন কিছু বিশেষণ আমি পেয়েছি এবং অচিরেই বা মরার পর এমন কিছু বিশেষণ পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, যে সম্পর্কে খোলাসা বয়ান মরার আগেই বলে যাওয়া দরকার।
এক সময় আমি সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠির সভাপতি ছিলাম। একবার এক বার্ষিক উৎসবের অনুষ্ঠানমালায় প্রাক্তন পরিচালকদের সাথে গান পরিবেশনের লাইনে মঞ্চেও দাঁড়িয়েছিলাম। সম্ভবত মল্লিক ভাই জোর করে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও আমি কোনদিন সাইমুমের পরিচালক ছিলাম না। আমার জানামতে এখন পর্যন্ত মল্লিকভাই ছাড়া আমিই ছিলাম সাইমুমের একমাত্র সভাপতি। কিন্তু সে সেশনে পরিচালককেই সভাপতি ঘোষণা দিয়ে মল্লিক ভাইকে উপদেষ্টা করা হয়েছিল।
যাক, এটা অনেকেই জানেন। বরাবর পরিচালকের কাজটাই আমাকেও করতে হয়েছিল।
অনুষ্ঠানের অনেক ছবি তোলা হয়েছিল, ভিডিও করা হয়েছিল। হয়তো সে সব কারো হাতে পড়তে পারে।
সাইমুমের সভাপতি হওয়ার সুবাদে এরকম একাধিকবার আমাকে মঞ্চে দেখা গেছে। এখন কেউ যদি বলেন, শিল্পী গোষ্ঠীর সভপতি মানে শিল্পীদের নেতা যখন ছিলেন তখন উনি যে শিল্পী ছিলেন তাতে সন্দেহ করার কি আছে। সঙ্গে স্টেজের সেই ছবি থাকলে চাক্ষুষ প্রমানও দেয়া যাবে। আমি যতোই বলি, আমি কোন শিল্পী না, আমার সে কথা গ্রাহ্য হবে না, বরং নতুন গবেষকের সচিত্র ফিচার প্রমান করে দেবে আমি শিল্পী। এরপরের গবেষক বলে দেবেন প্রখ্যাত শিল্পী। এমন কি আমাকে সাইমুমের একমাত্র সভাপতি করার কারণ আমি ছিলাম শিল্পীসম্রাট এমন দাবীও কেউ করে বসতে পারেন। না, হাসবেন না। এটা এখনো ঘটেনি তবে এরকমই একটা ঘটনা ঘটেছে আমার জীবনে।
তাহলে খুলেই বলি।
নসীম হিযাজীর দশটি জনপ্রিয় বইয়ের অনুবাদ সম্পাদনায় আমার নাম আছে। অনুবাদক আবদুল হক জানেন কী পরিমান সম্পাদনা করেছি।
ঘটনা এখানেই শেষ না। পাঁচ হাজার পৃষ্ঠার ক্রুসেড সমগ্র বাজারে আসার পর একটি মাসিক পত্রিকায় কাহিনী ধারাবাহিকভাবে ছাপা শুরু হয়। সেখানে মূল লেখক আলতামাস এবং অনুবাদক হিসাবে আমার নাম ছাপা হতে থাকে। কারো লেখা ছাপতে হলে যে অনুমতি নেয়া লাগে এটা হয়তো তারা জানতেন না। সম্মানীর প্রশ্ন তুললে শুধু লজ্জাই বাড়বে। আসলে এটি অনুবাদ ছিলনা। এটি ছিল আলতামাসের কাহিনীর ছায়া অবলম্বনে লেখা। মূল কাহিনীর অনেক কিছুই এখানে নেই আবার মূল কাহিনীতে নেই এমন অনেক কিছুই এখানে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এটাকে অনুবাদ বলা হয় না, বলা হয় ছায়াঅবলম্বনে। এখানেও তাই করা হয়েছে, ক্রুসেড যখন ত্রিশ খন্ডে প্রথম বেরোয় প্রতিটি খন্ডে তা উল্লেখ করা হয়েছে।
আমাকে যারা চেনেন তারা জানেন আমি এক লাইন উর্দুও পড়তে পারি না। সেখানে এত বিশাল বইয়ের অনুবাদ কি করে সম্ভব? এ অসম্ভবকে কি করে সম্ভব করেছি সে কাহিনী অন্যত্র বলেছি।
এবার আসি তৃতীয় ঘটনায়। নাতিয়াতুন্নবী নামে আমার একটি কাব্যানুবাদ বই আছে। প্রতিটি কবিতার ভাষান্তর কে করেছেন তার উল্লেখ কবিতার সাথে দেয়া আছে। কবিতাগুলো নেয়া হয়েছে আরবী ফার্সী ও উর্দু থেকে। কে সেটা বাংলা করেছেন তা বলে আমি তার কাব্যানুবাদ করেছি। ফলে আমাকে অনুবাদক বলাটা ভুল।
যা সত্য নয়, তা বলে প্রচার করা অন্যায়। আমি যা পারিনা তা স্বীকার করতে আমার লজ্জা নেই। এমন কোন বিশেষণ আমাকে দেবেন না যার যোগ্য আমি নই। আমি আল্লাহর একজন নগন্য গোলাম, দ্বীনের সামান্য খাদেম। খ্যাতি অখ্যাতি নয়, সততাই হোক আমার ভূষণ।
ইতোমধ্যেই আমার পরিচিতিতে এমন বিশেষণ উল্লেখ করা হয়েছে যার যোগ্য আমি নই। আমারওপর রহম করুন। আল্লাহ আমাকে যতটুকু দিয়েছেন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সামর্থ্য আমার নেই। দয়া করে কলাগাছকে কেউ বটবৃক্ষ বানাবেন না। সবার জন্য ভালবাসা থাকলো ও আমার জন্য দোয়ার দরখাস্ত রইলো।
৬/১/২২। বাদ ফজর।
No comments