মৃতের শহরে এসোনা নন্দিনী - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ১৮০

                                                                                                

কবিতা-১৮০ : মৃতের শহরে এসোনা নন্দিনী

অদ্ভুত মৃতের শহরে এসোনা নন্দিনী।

এ শহর অভিশপ্ত। এ শহর পাপিষ্ঠদের।

এ শহর আল্লাহর নাফরমানদের শহর।

এ শহর অবাধ্য গোলামদের শহর।

এ শহর ফেরাউনের শহর, নমরুদদের শহর।

না, নন্দিনী, তুমি এসোনা এ মৃতের শহরে।

 

তুমি আল্লাহর কালাম পড়োনি?

পড়োনি আদ ও সামুদ জাতির ইতিহাস?

অবাধ্য গোলামদের পরিণতি?

এ শহর গযবের সাগর মন্থন করে

ভেসে উঠেছে পাপ দরিয়ায়।

কী ভয়ংকর। কী কুৎসিত। কী অবিশ্বাস্য।

 

আমি একাকী ঘুরলাম সে মৃত জনপদে।

সুনসান অনাবিল শান্তির শহর।

গাছে গাছে ঝুলছে পরিপক্ক সুমিষ্ট ফল।

কমলা ও আপেলের বনে দুলছে টসটসে লেবুরস।

পাকা আমের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে বিনীত বাতাস। কী পরিকল্পিত, কী অদ্ভুত সাজানো গোছানো।

যেখানে যা দরকার সবই আছে, শুধু মানুষ নেই।

 

হ্যাঁ, রাজপ্রাসাদ আছে, রাজা নেই।

রক্ষীবাহিনীর অস্ত্রগুলো যত্রতত্র পড়ে আছে ফেলে দেয়া খেলনার মত, কিন্তু তোলার কেউ নেই।

নদীভরা মাছ আছে, কোন জেলে নেই।

মাঠে মাঠে সোনালী ধান দুলছে,

কিন্তু কেউ নেই সে ধান ঘরে তোলার।

শালিক, কবুতর ও নানরকম ছোট পাখিরা খেলা করছে সে শস্যদানায়

হায়রে অভিশপ্ত সুরম্য নগর।

 

বাতাসে ওড়ে যাচ্ছে কিশোরীর লাল ফ্রক। পতাকার মত দুলছে বানেছা পরীর শাড়ির আঁচল।

কত বেলী ফুল ফুটে আছে শুভ্রসফেদ, কোন রূপসী নেই খোঁপায় পরার।

 

নন্দিনী, সবচে অবাক ব্যাপার কি জানো?

আমি একাকী হাঁটছি, রাস্তার কুকুরগুলো

অবাক হয়ে আমাকে দেখছে।

বললাম, কী দেখছিস?

এবার কথা বললো কুকুর, মানুষ দেখছি।

আমরা তো কখনো মানুষ দেখিনি।

মা মানুষের যে চেহারার বর্ণনা করেছিল

তোমার চেহারা ঠিক সেই মানুষের মত।

তুমিই কি তবে মানুষ?

 

এর কোন উত্তর আমার জানা ছিল না।

আমি তখন পালিয়ে গেলাম সেখান থেকে।

ঢুকে গেলাম এক রাজপ্রসাদে। দেখি,

সিংহাসনে বসে আছেন মহামান্য সিংহ রাজা।

আমাকে দেখেই গর্জে উঠলেন,,

তুই, তুই কেন এসেছিস?

আবার আমার গদী দখল করার মতলব?

লোভী শয়তান কোথাকার। ভাগ এখান থেকে।

 

আমাকে ভাগতেই হলো।

কারণ সে সত্য বলেছে। সে বলেছে,

পৃথিবী কারো একার নয়। পৃথিবী সবার।

কিন্তু মানুষ এটা মানতো না।

দস্যুর মত লুটে নিত সবার অধিকার।

আর লুটেরারা তো লাঞ্ছিত হবেই।

গযব তাদের শেষ করে দিয়েছে।

 

আমি যখন নদীর ঘাটে এলাম, দেখলাম,

শত শত নৌকা ঘাটে বাঁধা। শুধু একটা নায়ের গলুইয়ে বসে আছেন এক বুড়ো মাঝি।

বললাম, এই মৃতের শহরে আপনি কেমন করে?

তিনি বললেন, আমি আল্লাহর গোলাম।

আমাকে জানানো হয়েছে, একদিন এক

নেকবখত বান্দা আসবে নদী পার হতে।

আমি বসে আছি তার অপেক্ষায়।

আপনিই কি সেই ব্যক্তি?

 

এবারও আমি নির্বাক।

খানিক দম নিয়ে বললাম, কিন্তু এতো এতো

সুরম্য রাজপ্রাসাদ রেখে আপনি

এ গলুইয়ে বসে আছেন কেন?

এ শহর তো এখন আপনারখুশি হননি?

 

প্রবীণ অবাক হলেন।

আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

আপনি তো ঠিক খোয়াজ খিজিরের বন্ধুর মতো।

আপনি কি জানেন না, লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু।

আমার ভেতর একবিন্দু লোভ জমা হলেই

আমি হবো এ শহরের সর্বশেষ অবাধ্য ব্যক্তি।

কোন বেঈমানের শহরে মানুষ বাঁঁচতে পারে না।

আমার এক নিঃশ্বাসের সমান মূলএ শহর কিনবে?

 

আমি আল্লাহর এক গোলামের নৌকায়

চড়ে বসলাম। বললাম, মাঝি,

জলদি নাও ছাড়ুন।

২৩/০৭/২০২১   ১১টা

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.