দি সন্তান পথে নামে - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ০৫৮
কবিতা-০৫৮ : দি
সন্তান পথে নামে
মাকসুদা, তোমার কি মনে আছে--
'গুডবাই কামরুন' বলে একদিন রাজপথে নেমেছিলাম স্বৈরাচারকে উৎখাত করবো বলে।
সেদিনই আমি শহীদ হয়ে যেতে
পারতাম।
ডাক্তার মিলন তো আমাদের না নিয়ে
একাই চলে গেল।
কঠিন দায়িত্ব চেপে রইলো আমাদের
কাঁধে।
যেদিন রাউফুন বসুনিয়া 'গনতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক'--
বুকে পিঠে লিখে শহীদ হয়ে গেল, সেই মিছিলের কথা
স্মরণ করো।
রাউফুন চলে গেল, রয়ে গেলাম আমরা।
সেদিন রাপজথে আমরা বারুদ হয়ে
ফেটে পড়েছিলাম, গুলি আমাদের থামাতে পারেনি।
গরম পানি আমাদের পথ আটকাতে
পারেনি। টিয়ারসেল রুদ্ধ করতে পারেনি আমাদের অগ্রযাত্রা।
সমস্ত বাঁধা, প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম
আমাদের আরাধ্য মনজিলে।
স্বৈরাচারের গদী টুকরো টুকরো করে
ভাসিয়ে দিয়েছিলাম বুড়িগঙ্গার জলে।
সিপাহী বিপ্লবের সৈনিকেরা চিৎকার
করে বলছিল, সাবাস নতুন প্রজন্ম, এগিয়ে
যাও, আমরা আছি তোমাদের সাথে।
দুহাত উপরে তুলে উনসত্তুরের আসাদ
বলেছিল, দেখো, দেখো, বাঙালি কোনদিন হারে না। জয়ের নিশান আমরা উড়াবোই।
তিতুমীর, বলে উঠলো,দেখলি দেখলি, ব্যক্তির
মৃত্যুতে জাতি মরে না বরং ব্যক্তির খুন হয় জাতির সঞ্জীবনী সুধা।
বিজয় নিয়ে আমরা ঘরে ফিরেছিলাম।
আমরা ভুলে গিয়েছিলাম-
'যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ।'
যে পায় ক্ষমতা সেই হয় স্বৈরাচার।
আমরা রাজনৈতিক পান্ডাদের কথায়
বিভ্রান্ত হয়ে ভুল বড়ি কিনে বাড়ি
ফিরলাম।
তারপর!
তারপর সেকি সুখনিদ্রা!
ঘুমঘোরে কেটে গেল আঁধার বিকেল।
ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রবিদ্যুতের এক
দুর্যোগময় রাত এসে গ্রাস করলো
আমাদের।
ততোদিনে, হ্যাঁ ততোদিনে আমাদের
পোষা বিড়াল বনবিড়াল হয়ে গেল।
গনতন্ত্র হয়ে গেল স্বৈরতন্ত্র।
তার বিশাল ছায়া ভোরের আলো ঢেকে
দিয়ে দুর্যোগময় রাতকে আরো প্রলম্বিত করলো।
এই পাহাড় না সরালে অন্ধকার যাবে
না।
মাকসুদা। পাহাড় সরানোর সাধ্য
আমার হয়তো নেই।
কিন্তু আমার সন্তান যদি পাহাড়
কাটতে নামে, তুমি তার পথ আগলে দাঁড়াবে না।
তাকে তার মত চলতে দিও।
খোদার দোহাই লাগে,
তোমার মমতা যেন
তার পথে বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়।
১৩/১০/২০১৯-৬টা
অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
No comments