ঘোড়ার ডিম খাও - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ০৫৯

                                                    

কবিতা-০৫৯ : ঘোড়ার ডিম খাও

স্বাধীনতা! তুমি কেমন আছো?

আমি তো আগের মতোই তোমার বিরহ বুকে নিয়ে আজো বেঁচে আছি। একটা জীবন পার করে দিলাম। আফসোস, তোমার দেখা পেলাম না।

 

তোমাকে দেখবো বলে একাত্তুরে

ঝাঁপ দিয়েছিলাম রক্তগঙ্গায়।

কিন্তু কী দুর্ভাগ্য, শুনতে পেলাম তুমি এসেছো, কিন্তু দেখা হলো না।

তোমাকে দেখবো বলে যেই রওনা দিতে যাবো, দেখি দৃর্বৃত্তরা আমার অস্ত্রাগার লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।

আমি বাঁধা দিলাম।

 

কিন্তু কি অবাক কান্ড, চানক্যের শিষ্যরা এসে স্বাধীনতা বন্দী করলো। স্বাধীন দেশের প্রথম রাজবন্দী হলো একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন সেক্টর কমান্ডার!

 

মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস যিনি ছিলেন আমাদের সেনাপতি,

কার ষড়যন্ত্রে তিনি আসতে পারলেন না স্বাধীনতার দলীলপত্রে স্বাক্ষর দিতে?

এক পাঞ্জাবী আরেক পাঞ্জাবীর হাতে আমার স্বাধীনতা তুলে দিয়ে চলে গেল। তোমার সাথে আমার দেখাই হলো না।

 

বুঝলাম না, এরা কারা?

কে আমাদের সেনাপতিকে অপমান ও অপদস্ত করে শাহজালালের মাজারে শুইয়ে দিল?

আমরা মুক্তিযোদ্ধারা হা করে তাকিয়ে দেখলাম, কিছুই করতে পারলাম না। শুধু অনুভব করলাম, আমার কষ্টার্জিত স্বাধীনতা আর আমার নেই, সে এখন ছিনতাই হয়ে গেছে।

 

হায়রে স্বাধীনতা,

তুই আমাকে এভাবে ফাঁকি দিলি?

যুদ্ধের নয় মাস যারা ছিল পাকিস্তানীদের সাথে,

যারা দেখেনি শরনার্থী শিবির,

যারা দেখেনি হাজার হাজার যুবকের ভারতে পালিয়ে যাওয়া,

দেখেনি মুক্তিযুদ্ধ কারে কয়,

কিভাবে লাল হয় পদ্মার পানি, একদিন দেখলাম তারাই ক্ষমতায় বসে হাবানা চুরুট ফুঁকছে।

 

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যিনি আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যিনি ছিলেন যুদ্ধকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী, তাকে যারা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু থেকে সরিয়ে দেয়, কি করে তারা হয় মুক্তিযুদ্ধে পক্ষের শক্তি, কেউ কি বলবেন আমাকে?

দেশের কলঙ্ক, যাদের কারণে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার হয় প্রথম রাজবন্দী, তারা কি করে হয় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি?

 

আমরা কি চিরকাল বাঙালই থেকে যাবো? আমরা কি মানুষ হবো না?

ময়ুরের পুচ্ছ পরে আর কতকাল দাঁড়কাক আমাদের ঘোড়ার ডিম খাওয়াবে?

০৫/১১/২০১৯

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.