সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ০৫৭
কবিতা-০৫৭ :
সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য
আমরা কি মানুষ?
না, মানুষ নই, সন্ত্রাসী।
মানুষ বলে পরিচয় দেয়ার যোগ্যতা
আমরা হারিয়েছি।
তবে কি অমানুষ?
না, অমানুষের মধ্যেও মানুষ শব্দটি আছে। আমরা তারও অযোগ্য।
মানুষ মানুষকে জানোয়ার বলে গালি
দেয়। তবে কি মানুষ পশু হয়ে গেল?
না, পশুরা কখনো মানুষের মত নিষ্ঠুর ও হিংস্র হতে পারে না।
এইসব মানুষেরা পশুরও অধম।
মেয়েরা পুরুষকে বলে, তুই একটা কাপুরুষ।
না না, কাপুরুষের মধ্যে যেটুকু পৌরুষ আছে,তাও এদের নেই।
পুকুর পাড়ে একদল হাঁস দেখে মনে
হলো, আচ্ছা, মানুষ কি হাঁসদের সমান হতে পারে?
না, পারো না। হাঁসেরা তাদের বাচ্চাদের আগলে রাখে, তুমি
কি তা পারো?
নিজের বেডরুমে যখন খুন হয়
সাংবাদিক সাগর রুনী,
তুমি কি তাদের নিরাপত্তা দিতে
পেরেছো?
যখন গুম হয়ে যায় তোমার
শত শত যুবক ছেলে, নাই হয়ে যায়
অমূল্যসব হীরের টুকরো,
তুমি কি জানো তারা কেমন আছে?
যখন বদরুল খাদিজাকে কুপিয়ে মারে,
নুসরাতকে ধর্ষণ করতে না পেরে
তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়,
ধর্ষণের পর খুন করা হয় তনুকে,
তুমি কি তাদের রক্ষা করতে পেরেছো?
তাহলে তুমি হাঁসদের সমকক্ষ হওয়ার
স্বপ্ন দেখো কেমন করে?
যে দেশে শত যুবতীকে ধর্ষণ করে
সেঞ্চুরীর গর্ব করা হয়, তুমি কি মনে করো সে দেশে এখনো কোন মানুষ
বেঁচে আছে?
আইয়ামে জাহেলিয়াতের কথা শুনেছো।
কন্যা শিশুকে জীবন্ত কবর দিতে
শুনেছো।
কিন্তু এখন যা চলছে, তা কি কেউ কল্পনা করতে পেরেছিলে?
হায়রে সভ্যতা, হায়রে মনুষত্ব!
এটা কি কোন মনুষ্য সমাজ?
তুমি তো এক স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের
অসহায় ভীতু নাগরিক।
এতোটাই অসহায় যে, নিজেকে ঘৃণা করার সাহসটুকুও হারিয়ে
ফেলেছো।
যদি রাষ্ট্র জানতে পারে তুমি
নিজেকে ঘৃণা করো, হৃদয়ের ভেতর লুকিয়ে রাখো কষ্ট, তাহলে এই অপরাধে তোমাকে আটক করা হবে।
তোমাকে বলতে হবে, যখন দেশ
উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে,
তখন এই কষ্ট ও ঘৃণা কিসের জন্য?
আমি জানি, জবাব দেয়ার সাহস তোমার নেই।
তাহলে এই বেআইনী কষ্ট ও ঘৃণার
অপরাধে তোমার জেল হয়ে যেতে পারে।
যাবজ্জীবন, এমনকি ফাঁসিও হতে পারে।
আমরা এমন এক রাষ্ট্রের বাসিন্দা
যেখানে তার নাগরিককে পিটিয়ে
মেরে ফেললেও কোন অপরাধ হয় না।
আর যদি সে শিবির হয় তবে তো কথাই
নেই।
না না, কারো শিবির হওয়ার দরকার নেই।
প্রশ্নটা হচ্ছে, কেউ তাকে শিবির মনে করে কী না। ব্যস,তাহলেই হবে।
বিশ্বজিতকে প্রকাশ্য দিবালোকে
যখন কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছিল,
তখন সে চিৎকার করে বলছিল,
না না আমি শিবির না, শিবির না। আমি হিন্দু। তাতে কোন লাভ হয়েছিল?
না। বিশ্বজিতকে শিবির হয়েই মরতে
হলো।
মনে রেখো, যারা সন্ত্রাসকে আশ্রয় দেয়, তারাও সন্ত্রাসী।
যারা সন্ত্রাসের ভয়ে চুপ করে
থাকে, তারাও সন্ত্রাসী।
তবে কি বাংলাদেশ
সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য হয়ে গেল?
১১/১০/২০১৯
অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
No comments