আপনারাও ভাল থাকবেন - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ২০৫

                                                                                                     

কবিতা-২০৫ : আপনারাও ভাল থাকবেন

আপনারা বার বার আমাকে জিজ্ঞেস করেন, আমি কেমন আছি?

যতো বলি, ভালো আছি, ভালো আছি, আপনাদের কি বিশ্বাস হয় না?

 

শোনেন, পৃথিবীতে বিরল সংখ্যক

মানুষই সুখী হয়।

আমি সেই বিরল প্রজাতির একজন।

অতএব আমি ভালো থাকবোই।

নিজে কখনো কষ্ট করিনি, বেদনা বিষে বিবর্ণ হইনি, দুঃখ পাইনি, হতাশ হইনি।

বরং ওসব আমাকে নিত্যনতুন অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ করেছে। বলুন তো,

তকদিরের অধিক কে বেশী পায়?

 

প্রভু আমাকে এতটা দিয়েছেন,

সারা জীবন সেজদায় পড়ে থাকলেও তার শোকর আদায় হবে না।

আমাকে এতকিছু দিয়েছেন যা কোন কবি লিখে শেষ করতে পারবে না।

তিনি আমাকে হাত দিয়েছেন, পা দিয়েছেন, ভালবাসার জন্য আবেগ দিয়েছেন, টিকে থাকার জন্য বিবেক দিয়েছেন।

 

এমনকি আল্লাহর এ অপূর্ব সৃষ্টি দেখার জন্য আমাকে দুটো চক্ষু দিয়েছেন।

ভাল কথা শোনার জন্য দুটো কানও দিয়েছেন।

ভাবুন, যদি জিহ্বা না দিতেন তবে কোনটা মিষ্টি আর কোনটা টক

আমি কি করে জানতাম?

আমার ভালো থাকার জন্য এইতো যথেষ্ঠ।

 

আমাকে তিনি এতটা বছর বাঁচিয়ে রেখেছেন, হায়াত দিয়েছেন,

রিজিক দিয়েছেন, থাকার জন্য

নিরাপদ জায়গা দিয়েছেন, আর কি চাই?

 

আমাকে এমন একজন বন্ধু দিয়েছেন যার শোকর আদায় করার ভাষা আমার নেই। তার কোন চাহিদা নেই। কখনো কিছুই চাননি। এমনকি ঈদের সময় একটা নতুন শাড়ির আবদারও কখনো করেননি।

আমি ভাল থাকবো না তো কে ভাল থাকবে?

 

আমার কখনো সাহস হয়নি জিজ্ঞেস করি, আমি যখন জেলে গেলাম তখন কি তিনি বিয়ের আংটি, না কানের দুল বিক্রি করে আমার জামিনের ব্যবস্থা করেছিলেন? বলুন, আমি ভাল না থেকে কি পারি?

 

আমার রমরমা একটা ব্যবসা ছিল। ভাল একটা চাকরীও ছিল।

কিন্তু কি হলো? আচমকা দেখলাম আমার ব্যবসাও নাই, চাকরীও নাই। খালি হাতে ঘরে ফিরে এসে সবর করলাম, শোকরও করলাম। আরওতো খারাপ কিছু হতে পারতো!

 

তারপর কত বছর পার হয়ে গেল।

আগের মতই খাচ্ছিদাচ্ছি, শুয়ে পা নাচাচ্ছি, কবিতা লেখছি। রিজিক দেয়ার দায়িত্ব যার তিনি নিয়মিতই রিজিক পাঠাচ্ছেন। তাহলে আমার ভাল না থাকার কি কারণ ঘটতে পারে?

 

রিটায়ার্টের পর স্ত্রীরা একটা বাড়ির জন্য স্বামীদের পাগল করে তোলে। কিন্তু তিনি কিছু বললেন না। বরং

আমাকে শান্ত্বনা দিয়ে বললেন, এ নিয়ে ভেবোনা তো। ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। আরামেই তো আছি।

সারা জীবন ভাড়া বাড়িতে ছিলাম।

আজ এখানে, কাল ওখানে, কত বাড়িই তো দেখার সৌভাগ্য হলো। দুদিন পরপর নতুন বাড়ি দেখার সৌভাগ্য কজনের হয়?

 

গ্রামে বাবার একটা ভিটা ছিল।

বাবা মা মারা যাবার পর ওটা এতীমের মত পড়েছিল।

গেল হপ্তায় বাড়ি গিয়ে ওটা ভাঙারির কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। যাক, বাপের বাড়ি, নিজের বাড়ি কোন বাড়িরই আর দুশ্চিন্তা রইলো না।

কী দরকার শাদ্দাদের বেহেশত বানিয়ে?

 

ওই নাশোকর হতভাগ্য বান্দার জন্য আমার দুঃখ হয়।

বলতে পারেন একটু মায়াও হয়। কিসের অভাব ছিল তার?

ধনদৌলত, সহায় সম্পদ, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, সবই তো ছিল। বেহেশতও বানিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, সে বেহেশতে পা ঢুকানোর ভাগ্য তার ছিল না।

 

সত্যি, এমন ক্ষমতাবানদের দেখলে করুণা হয় আমার। সারাটা জীবন শুধু কষ্টই করে গেল, একটু আরাম করারও ফুসরত পেলো না।

মানুষ চাইলেই কি সব হয়? কিছুই হয় না।

 

কত দেখলাম, দেশবরেন্য নেতা মারা যাওয়ার পর তার জানাযায় আবু ফকিরের জানাযার সমান লোকও হয় না। হায়রে দুনিয়া, হায়রে দাপট।

 

আপনাদের একটা অনুরোধ করি, আমি কেমন আছি আর জানতে চাইবেন না।

মনে রাখবেন, আমি ভাল ছিলাম, ভাল আছি এবং আরো যে কদিন বাঁচবো, আমি ভালই থাকবো।

কারণ, আমার প্রভু আমাকে যেভাবে রাখেন আমি তাতেই খুশী।

আপনারাও ভাল থাকবেন।

২৮/০৫/২০২২ বাদ মাগরিব

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.