মেয়েটা বাড়ি যাবে - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ১৮৮
কবিতা-১৮৮ :
মেয়েটা বাড়ি যাবে
কবিতাটা শুনলাম। খুব মন দিয়ে
শুনলাম। একটা অপরিণত মেয়ের কষ্টকান্না।
মেয়েটা বাড়ির জন্য কাঁদছে। নিজের
বাড়ি যাবে। সবারই বাড়ি চাই। ওরও একটি বাড়ি চাই। নিজের বাড়ি।
কিন্তু কোনটা নিজের বাড়ি?
মেয়েরাও মায়ের উদর থেকে নেমে
আতুরঘরেই হেসে উঠে অলীক বাড়ি পেয়ে।
বলে, এই তো
আমার বাড়ি। এখানে আমার মা আছেন, বাবা আছেন। আছেন ভাইবোন, স্বজন পরিজন।
আদর সোহাগ আছে। মায়া মমতা আছে।
কী নেই এখানে?
মানুষ বালু দিয়ে বাড়ি বানায়।
ছেলেমেয়ের বিয়ে দেয়। তাদেরও নিজের স্বামী হয়, বউ হয়। আপন স্বামী, আপন
সন্তান।
আপন বাড়ি।
মায়ের উদর থেকে আতুর ঘর, আতুর ঘর
থেকে বাপের বাড়ি,
বাপের বাড়ি থেকে স্বামী সংসার। এক দোলনা থেকে আরেক দোলনা।
দোলনা থেকে দূরন্ত কাঠের ঘোড়া। দৌড় দৌড় দৌড়।
তারপর একদিন। ছেলে ও স্বামীর
কাঁধে চড়ে যেতে হয় নিজের বাড়ি।
কী আশ্চর্য!
আর তোমার ভাই?
ব্যাটা, ঘোড়া
চড়তে শেখো। তোমাকে যুদ্ধে যেতে হবে। কাজ শেখো। তোমাকে কর্মবীর হতে হবে।
শেখো সংসারের হাল ধরা। পরের
মেয়ের স্বাদআহ্লাদ তোমাকেই পূরণ করতে হবে। তাকে গড়ে দিতে হবে পুত্রকন্যাসমেত সুখের
দুনিয়া।
তারপর তোমাকেও শুয়ে থাকতে হবে
জননীর পায়ের নিচের তৃপ্তির বেহেশতে।
একদিন তুমিও নিজের বাড়ি যাবে
সন্তান বা পড়শির কাঁধে চড়ে।
ও মেয়ে, মায়ের
পেট তোমার বাড়ি নয়,
দোলনায় দোল খাওয়া কোন বাড়ি নয়, কাঠের
ঘোড়ায় চড়ে ভোঁদৌড় কোন বাড়ি নয়।
ও মেয়ে! কে বলে তোমার বাড়ি নেই? বাড়ি
যাবে? নিজের বাড়ি?
মায়ের পায়ের তলে সন্তানের যে
বেহেশত, সে সন্তানের কাঁধে চড়েই একদিন তুমিও বাড়ি যাবে।
বাড়ির জন্য আফসোস করো না। মনে রেখো, সবাই নিজের বাড়ি যাবে।
কোন মানুষই বাড়িহীন নয়। শুধু
আফসোস, মানুষ কোনদিন পায়ে হেঁটে নিজের বাড়ি যেতে পারে না।
কী? কবর
কারো নিজের বাড়ি হতে পারে?
ও তো কাউন্টার মাত্র। টিকেট কাটো। বাড়ি তো জান্নাত বা
জাহান্নাম।
ও মেয়ে নিজের বাড়ি যাবে? কোনটা
নিজের বাড়ি? জান্নাত? না, জাহান্নাম?
০৬/০১/২০২২ বাদ এশা
অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
No comments