এসো নতজানু হই - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ২২৭

                                                                                                          

কবিতা-২২৭ : এসো নতজানু হই

আমি বুঝি না মানুষের মাঝে

কি করে দুঃখবোধ আসে।

কষ্ট আসে।

না পাওয়ার হাহাকার আসে।

 

কি ছিল তোমার?

কিছুই না। এমনকি তুমিও না।

যিনি দয়া করে তোমাকে বানালেন,

তোমাকে দিলেন সুন্দর অবয়ব,

হাতপা দিলেন, ভুরু দিলেন,

আর পৃথিবী দেখার জন্য দিলেন চমৎকার একজোড়া চোখ,

তুমি কি সে জন্য খুশী নও?

 

সাগরের কল্লোল, ঝর্ণার গান,

নদীর কলতান ও পাখির কাকলী শোনার জন্য দিলেন কর্ণকুহর, পুষ্পের ঘ্রাণ নেবার জন্য নাসিকা যুগল, এ জন্য কি তুমি খুশী নও?

 

যিনি এসব দিলেন তিনি দয়া করে যদি এসব না দিতেন তাহলে কি করতে তুমি? কি করতে পারতে?

 

জোস্নারাতে প্রিয়জনের হাত ধরে

এই যে মুখোমুখি বসে থাকা,

এই যে হৃদয় তোলপাড় করা ভাললাগা, এই জোস্না, এই ভাললাগার অনুভব কি

তুমি কোন বিপনী বিতান থেকে ক্রয় করে এনেছো?

 

তাহলে যা পাচ্ছো, যা পেয়েছো,

তার শোকর না করে কেন বিধাতাকে অভিশাপ দিচ্ছো?

কেন

অভাব অভাব বলে চিৎকার করছো?

কেন দুঃখবোধ তাড়া করছে তোমাকে?

 

কিসের অভাব তোমার?

তুমি কি ঘুমোনোর জন্য রাত পাওনি?

রিজিক খোঁজার জন্য দিন পাওনি?

তোমাকে হুকুম করা হয়েছে,

ফজর পড়ে রিজিকের তালাশে বেরিয়ে যাও, সে হুকুম অগ্রাহ্য করে তুমি কিসের তসবি টেপো?

 

যদি প্রভুর হুকুম তুমি মানতে তবে দুনিয়াতে দুঃখ বলে কিছু তুমি খুঁজে পেতে না।

মানুষ অবাধ্য বলেই তাকে ঘিরে ধরে কষ্ট,

না পাওয়ার অভাববোধ।

দুঃখ সবই মানুষ কামাই করে।

 

আল্লাহ তো কোন কিছুর অভাব রাখেননি!

তুমি পিপাসা পেলে ডাবের পানি পাও।

সুমিষ্ট ফল খেয়ে তুমি তৃপ্তির ঢেকুর তোল,

এর সবই তো তাঁর দান।

 

হে মানুষ, তুমি তোমার

অধিকারের ব্যাপারে সচেতন নও,

দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন নও,

কর্তব্যের ব্যাপারে যত্নবান নও,

তাই অন্যেরা তোমার অধিকার কেড়ে খায়।

 

তোমার অভাব দূর করার জন্য কি

জাকাতের বিধান দেয়া হয়নি?

এ বিধান চালু করার দায়িত্ব তোমার।

তোমার অবহেলায় এ বিধান চালু না থাকলে সে অপরাধ কার?

এটা চালু করার জন্য কি এখন আসমান থেকে ফেরেশতা পাঠাতে হবে?

 

না। পৃথিবীতে কোন দুঃখ নেই।

কোন কষ্ট বা অভাব নেই। সবটাই তোমাদের লোভ, পাবার অসীম আকাঙ্খা আর তোমাদের অধিকার আদায়ের সীমাহীন ব্যর্থতা।

তোমার শত্রু তুমি। তোমার শত্রু তোমার লোভ ও ব্যর্থতা।

 

যিনি তাঁর অপার ভালবাসা দিয়ে

শূন্য থেকে তোমাকে সৃষ্টি করেছেন,

যিনি তোমাকে সুখী করার জন্য

যুগল সৃষ্টি করেছেন, যিনি গ্রহ নক্ষত্র ও সীমাহীন পতঙ্গকুল পাঠালেন তোমারই সেবার জন্য, তিনি কি তোমাকে দুঃখী দেখতে পছন্দ করবেন?

 

না, এটা সম্ভব নয়, বাস্তব নয়।

সুখী হতে চাইলে এসো নতজানু হই।

নতজানু হই। নতজানু হই।

১২/০৯/২০২২ বাদ এশা

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.