বিপন্ন বালিশে স্বপ্নসাগর - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ২২৮
কবিতা-২২৮ :
বিপন্ন বালিশে স্বপ্নসাগর
মেঘের জাহাজে করে তিনি এলেন।
এসেই বললেন, লিখে যাও কবি, লিখে যাও।
একবার নয় বহুবার এসেছেন তিনি।
আসেন রাজার হালে। দেখলেই ভক্তি
করতে ইচ্ছে করে।
যতবার আসেন, এক কথা। লিখে যাও কবি, লিখে যাও।
লিখো সেইসব নিরন্ন মানুষের কথা, যাদের সম্পদ দস্যুরা নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছে বিকিনিময় সমুদ্র পাড়ে।
লিখো সেই মায়ের কথা, যার সন্তান এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে অনিশেষ পুষ্পোদ্যানে। আরো কত কি।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি, ইনি কি রাজা না রাজপুত্র? বেঁচে থাকতেই তিনি অনেকের
কাছে ছিলেন এক অলৌকিক রাজকুমার। তিনি শূন্য থেকে আকাশ বানাতে পারতেন, সাগর বানাতে পারতেন। তিনি হাত দিলেই পথের ধুলোও সোনা হয়ে যেতো।
অবাক করা ব্যাপার কি জানেন,
তিনি এসেই বলেন, চলো কবি ঘুরে আসি।
আমরা ঘুরতে বেরোই।
কখনো চারদিক সবুজ বনানী বেস্টিত
স্বচ্ছতোয়া জলাশয়ে আমরা ঘুরে বেড়িয়েছি। চারপাশে বিচিত্র বৃক্ষের সমারোহ।
সোনার পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা
হ্রদের শীতল জলরাশিতে অজু করতেন তিনি।
কখনো নিয়ে যেতেন এমন বাগানে,
যে বাগান মনুষ্য নেত্রযুগল কখনো
অবলোকন করেনি।
গাছে গাছে অচেনা ফুলের সমারোহ।
ওরা হাসাহাসি করছে অবিকল কিশোরীর মতো। তাদের সলজ্জ হাসির ঢেউয়ে গড়িয়ে পড়ছে
বৃন্তচ্যুত ফুলদল, কোমল পাঁপড়ি সদৃশ।
আহ, সে কি দৃশ্য। সে দৃশ্যের বর্ণনা দেয় এমন মানুষ কি কখনো জন্ম নেবে?
পাখির কলকাকলি মধুবর্ষণ করছে
কর্ণে।
প্যারিসের আতর যেন কেউ মেখে
দিয়েছে সে ফুলের পাপড়িতে।
তিনি আমাকে নিয়ে ঘুরতেন এমন এক
যানে,
যা মাটি, পানি ও বাতাসে সমানতালে চলতে পারে।
মানুষ নয়, মনে হয় ফেরেশতারা সে যান চালায়। মুহূর্তে চলে যায় এক দেশ থেকে আরেক দেশে,
ফুল বাগান থেকে ফুলোদ্যানে।
এসব অলৌকিক দৃশ্য দেখে মনে হয়, আমি যেনো মহামান্য বাদশাহর রাজকীয় মেহমান।
যখন ঘুম ভাঙে আমি চোখ বন্ধ করে
চুপচাপ পড়ে থাকি ঘুমন্ত মানুষের মত। মনে হয়, আমি এক অলৌকিক
পালকিতে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম ইন্দ্রনীল পাহাড় থেকে পাহাড়ে।
আমি তার স্বাদ উপভোগ করি।
তারপর।
তারপর চোখ খুলে দেখি, লোডশেডিংয়ের কারণে আমার ফ্যানটি আমার দিকে করুণ নয়নে তাকিয়ে আছে। ঘামে
ভিজে গেছে ছেঁড়া বালিশটার এক তৃতীয়াংশ। আমি শুয়ে আছি ভাঙা খাটের এক বিপন্ন বালিশে।
১৬/০৯/২০২০২২ বাদ ফজর
অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
No comments