আসুন একটু কাঁদি - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ১৭৪

                                                                                               

কবিতা-১৭৪ : আসুন একটু কাঁদি

না, এটা কোন কবিতা নয়। এখানে কেউ কবিতার উপমা ও উৎপ্রেক্ষা খুঁজবেন না। চিত্রকল্প ও অলংকার খুঁজবেন না। কবিতার রসের সন্ধান না পেলে নিরাশ হবেন না।

মর্সিয়া কোন কবিতা নয়, বেদনার বিলাপধ্বনি। সীমাহীন কষ্টকান্না।

 

হে প্রিয় জনগণ, হে প্রিয় বাংলার মুসলমান, হে আলেম ওলামা, হে সম্মানিত পীর মাশায়েখ, হে নায়েবে নবীগণ।

 

আমি বাংলার এক হতভাগা কবি।

আপনাদের মত আমার বিদ্যাবুদ্ধি নেই। কোরান হাদীসে গভীর পান্ডিত্ব নেই। পৃথিবীর অনেক কিছুই আমি জানি না।

 

তবে আল্লাহ আমাকে যে মগজ দিয়েছেন, বিবেকের সাথে যে বুদ্ধি দিয়েছেন, তাতে আমি জানতে পেরেছি, কেউ আর্মিতে থাকলেই শুধু আর্মির আইন তাকে মানতে হয়। জনসাধারণের জন্য আর্মির আইন প্রযোজ্য নয়। যেমন অমুসলমানের জন্য জরুরী নয় ইসলাম মানা।

 

আমি কি ঠিক বললাম?

নাকি ভুল কিছু?

 

আমি এও বুঝেছি: কেউ যদি প্রকাশ্যে ঘোষণা করে, কোন প্রভু নেই আল্লাহ ছাড়া আর প্রশংসিত মহামানব মুহাম্মদ সা. তাঁর রাসূল, তাহলেই সে হয় ঈমানদার। ঈমান আনার কিছুক্ষণের মধ্যেই নামাজের সময় হয় এবং তাকে আল্লাহর সামনে সিজদা দিয়ে প্রমাণ করতে হয়, তার ঘোষণা সত্যি। মুমীন হওয়ার সাথে সাথে সে মুসলিমও হয়েছে।

যদি সে তা না করে তবে এটা প্রমাণিত হয়ে যায়, সে একজন মিথ্যুক, প্রতারক। সে মোনাফেক।

সে নিজেকে আল্লাহর দাস হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে সত্য, কিন্তু মুসলমান হয়নি। এ ঘোষণা তার ছলনামাত্র।

 

সে যদি নিজেকে সত্যি অনুগত গোলাম মনে করতো, তবে আল্লাহর সব নির্দেশ সে মেনে নিতো।

এভাবে অন্যথা বা প্রতারণা করতো না। সে হতো আল্লাহর নির্দেশের একান্ত অনুগত।

 

আল্লাহর হুকুমকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর দুঃসাহস কোন মুসলমান করতে পারে না। আল্লাহর নির্দেশকে অবজ্ঞা করে সে নিজেই নিজেকে অপরাধী বানিয়ে নিয়েছে।

 

হে সম্মানিত বুজুর্গানে দ্বীন, আমাকে মাফ করবেন। আপনাদের কাছে আমি জানতে চাচ্ছি, ইসলাম কেন এসেছিল দুনিয়ায়?

কতিপয় মোফাসসির, পীর, দরবেশ ও বুজুর্গানে দ্বীনকে আলেম ওলামা বানাতে? তাদের চাকরী ও রোজগারের ব্যবস্থা করতে?

হাফেজকে দিয়ে তারাবীর নামাজ পড়াতে?

এতীমখানার জন্য বেতনভুক কর্মচারীর নামে কতিপয় ভিক্ষুক সমাজে ছড়িয়ে দিতে?

 

বলুন, বলুন। আপনিতো ইমামতির চাকরী করেন।

বেতন পান, নামাজ পড়ান। তাহলে

আপনি যে নসীহত করেন, দিনে পাঁচবার নামাজ পড়া ফরজ, আল্লাহর সে ফরজ আপনি কখন আদায় করেন? এক নামাজ দিয়ে আপনি আমাকে ও আল্লাহকে একসাথে সন্তুষ্ট করে ফেলেন?

 

প্লিজ, আমাকে ভুল বুঝবেন না।

আপনাদের নসীহত থেকেই জানতে পেরেছি, ইসলাম মানে শান্তি।

ইসলাম এসেছে দুনিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে।

আমার খুব কষ্ট হয়, যখন দেখি, শান্তি প্রতিষ্ঠার বদলে আপনারা ধর্মে ধর্মে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন?

শিয়া সুন্নীর বিরোধ তৈরি করছেন?

ফেরকায় ফেরকায় বিরোধ উস্কে দিচ্ছেন?

 

আহলে হাদীস ও আহলে সুন্নাহর বিরোধ কারা সৃষ্টি করেছে?

কিয়াম দাঁড়িয়ে করবেন, না বসে করবেন এটা শিখানোর জন্য কি ইসলাম এসেছে?

গোল টুপী না কিস্তি টুপী পরবেন, এই বিরোধের জন্য কি ইসলাম এসেছে?

 

হে আমাদের কান্ডারী, আমাদের মাথার তাজ, ওয়ারেসাতুল আম্বিয়া, আপনারা কবে যাবতীয় দলাদলি বাদ দিয় আল্লাহর কালাম ও রাসূলের হাদীস আঁকড়ে ধরবেন? মতলবী কোরআন শিখানো বন্ধ করে কবে কোরানের আসল শিক্ষা মেলে ধরবেন জনতার সামনে?

 

আপনি কি আপনার সাড়ে দিন হাত শরীরে ইসলাম কায়েম করতে পেরেছেন? আমাকে নসীহত করার আগে নিজেকে নসীহত করুন।

আপনার পরিবারকে নসীহত করুন।

মহল্লাবাসী ও আত্মীয়দের দোজখের আগুন থেকে বাঁচান।

 

আপনারা কি জানেন না, আত্মীয়তার হক নষ্ট করলে তার শাস্তি কি? পিতামাতার হক নষ্ট করলে তার পরিনাম কি?

পড়শির হক রক্ষা করা কতটা জরুরী?

সমাজে ফেতনা সৃষ্টি করা কতটা খারাপ?

 

প্লিজ, এসব বন্ধ না করে বলবেন না,

ইসলাম এসেছে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে।

ইসলাম এসেছে সমাজে সুখ বিলিয়ে দিতে।

ইসলাম এসেছে জীবনকে সুন্দর করতে।

ইসলাম এসেছে সমাজকে পরিশুদ্ধ করতে।

 

প্লিজ, আপনি সেই রাসূলের উম্মত, যিনি তাঁর শত্রু বুড়িকে সেবা দিয়ে ভাল করে তুলেছিল।

 

সমাজের এ কাঙ্খিত পরিবর্তনের আগে নফল এবাদতের নাম পরহেজগারী হতে পারে না। তসবি টেপার দায়িত্ব দিয়ে রাসূল সা.কে দুনিয়ায় পাঠানো হয়নি।

 

আপনি তাঁর উম্মত। আপনাকে আল্লাহ করেছেন তাঁর খলিফা। আপনাকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে আল্লাহর সৃষ্টির সেবা করতে। তামাম বিশ্বের সমস্ত সৃষ্টিকুলকে দেখভাল করার পবিত্র দায়িত্ব আপনার কাঁধে।

 

আপনার কাজ হলো, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। মিথ্যাকে অপসারণ করে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা।

পৃথিবীর সব মন্দ উচ্ছেদ করে সেখানে শুভকে প্রতিষ্ঠিত করা।

 

রাসূলের দেখানো মানব সেবা বাদ দিয়ে কোথায় পেলেন আপনি তসবি টেপার সুন্নত? কে আপনার হাতে ধরিয়ে দিল ফরজের পরিবর্তে নফলের জাহাজ?

 

হে আমার দুর্ভাগা জাতি। আমি আপনাদের সেই দুর্বল ও নগন্য কবি, যে এখনো বুঝাতে পারিনি সত্য ও সুন্দর কি? ভালো ও মন্দ কি? ন্যায় ও অন্যায় কি?

আমার এ অক্ষমতার জন্য প্রভুর কাছে অবিরত কান্না ছাড়া আমার আর কিইবা করার আছে!

 

আল্লাহরওয়াস্তে আমাকে একটু কাঁদতে দিন। একটু কাঁদত দিন।

পারলে, আপনারাও আমার সাথে কান্নায় শরীক হোন, যেনো প্রভুর রহমের বৃষ্টি নামে সবুজ এ বাংলায়।

 

আপনার দুঃখে আজো আকাশ কাঁদে, মেঘ কাঁদে, কাঁদে বৃষ্টির ধারা।

সর্ষে ফুলের ডগায় কাঁদে কুয়াশার চাঁদর। আসুন, সুন্দর ও সত্যের জন্য সবাই একটু কাঁদি।

১৫/০৭/২০২১   ৩টা

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.