পনেরোই আগস্টের কবিতা - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ৩৭৭

          

কবিতা-৩৭৭ : পনেরোই আগস্টের কবিতা

কী অদ্ভুত কান্ড! আমি তাহলে মরিনি!

এইতো আমার স্মৃতিশক্তি ফিরে আসছে।

এইতো আমি চোখ মেলতে পারছিহ্যাঁ, আমি আবার দেখতে পাচ্ছি। আমি শুনতে পারছি।

হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি বেঁচে আছি।

 

আপনাদের মনে আছে? একবার

হেমিলন শহরে এক বংশীবাদক এসেছিল। সে বাঁশি বাজালে হাজার হাজার ইঁদুর তার সাথে ছুটতো। সে তাদের নিয়ে পাহাড় থেকে নদীতে

ফেলে দিয়ে মেরে ফেলতো।

 

কিন্তু সে তো অনেকদিন আগের কথা। হঠাৎ আমার এ কথা মনে হলো কেন?

শুনুনশুনুন, যাদু সম্রাট পিসি সরকারের কথা কি আপনাদের মনে আছে?

তাঁর যাদু দেখার সৌভাগ্য আমার

কোনদিন হয়নি।

সেই ছোটবেলা যখন স্কুলে পড়ি,

বাড়ি ফেরার সময় একদিন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যাদুর খেলা দেখেছিলাম।

একলোক শত শত চোখের সামনে

একটা বালককে মাটিতে শুইয়ে দেহ থেকে তার মাথা আলাদা করে ফেলেছিল। উহ, আল্লাহ, ছেলেটির কাটা মাথা থেকে টপটপ রক্ত পড়ছে। আমি তখন জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

 

এরপর কি ঘটেছে আমার আর দেখা হয়নি। বাড়ি কাছেই ছিল। খবর পেয়ে বাড়ির লোকজন এসে আমাকে নিয়ে যায়। শুনেছি, ভানুমতিও এমন অদ্ভুত সব খেলা দেখাতে পারতো।

 

এসব এ জন্য বলছি, এখন যে কথা বলবো,এসব ঘটনা তার কাছে তুচ্ছ।

আমি দেখেছি একটি দেশের জন্ম। দেখেছি সশস্ত্র সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিরীহ মানুষের মরণপণ লড়াই। দেখেছি যুদ্ধ। বারুদের ঝাঁঝাঁলো গন্ধের সে কি তীব্রতা! দেখেছি দাউ দাউ আগুনের লেলিহান শিখা। দেখেছি বুক টান করা সাহস। দেখেছি ইতিহাসের সেই অমর নায়ক

যার বজ্রকন্ঠের আওয়াজে

বাংলার মানুষ সেই বংশীবাদকের

ইঁদুরগুলোর মতই অবলীলায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মরণপণ লড়াইয়ে

আর ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার রক্তলাল পতাকা

 

আমি বলছি সে বজ্রকন্ঠের কথা।

পৃথিবীর সমস্ত অলৌকিকতাকে ম্লান

করে দিয়েছিল যে কন্ঠ। যার বাণী ইথারে ইথারে আজও ভেসে বেড়ায়।

কোন রাইফেল লাগেনি।

কামান, বিমান, বন্দুক লাগেনি।

দেখতে হয়নি বেয়নেটের উচ্চতা।

ছুঁড়তে হয়নি মিসাইল। বরং

তিরানব্বই হাজার সমরাস্ত্র সজ্জিত সৈন্যকে বিনি সুতোর শিকলে বেঁধে

তিনি তাড়িয়ে দিয়েছিলেন দেশ থেকে।

 

কি বিস্ময়কর! একটা শিশুর জন্ম হতে যে সময় লাগে তারও চেয়ে কম সময়ে পাকিস্তানের পেটের ভেতর বসে একজন মানুষ জন্ম দিলেন বাংলাদেশ নামক একটি দেশের।

 

আজ পনরই আগস্ট।

ধিক্কার জানাই সেই কুলাঙ্গার সন্তানদের যারা রাতের আঁধারে নিজের পিতাকে হত্যা করে।

আফসোস! সেই দেশের জন্য

যেই দেশে এমন কুলাঙ্গার সন্তান পয়দা হয় যারা নিজের পিতাকে হত্যা করতেও কুন্ঠিত নয়।

আহা! তারা যদি জানতো, হত্যা করে কাউকে মারা যায় না। বরং তাকে বাঁচিয়ে দেয়া হয়।

 

মানুষতো জন্মই নেয় মরার জন্য। কে বাঁচে বলো। কাউকে মেরে তুমি কেন কলঙ্কের কালি ললাটে মাখো। আর ক্রমাগত মানুষের অভিশাপ ও ঘৃণা কুড়াও? হত্যা, খুন, ফাঁসি এসব তো কেবল তাদের প্রসিদ্ধি বাড়ায়।

০৩/০৯/২০১৮  সাড়ে ৮টা

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.