নদী তীরে বাবার জন্য - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ০৬৪

                                                         

কবিতা-০৬৪ : নদী তীরে বাবার জন্য

আপনারা আমার বাবাকে চেনেন?

আমি স্বাধীনতার সন্তান।

আমার বাবার নাম স্বাধীনতা।

বাড়ি বাংলাদেশ।

 

উনিশশো একাত্তুর সালে

শোষণহীন এক সমাজের জন্য

বৈষম্যহীন এক রাষ্ট্রের জন্য

স্বৈরাচারহীন এক সরকারের জন্য

অবাধ গণতন্ত্রের জন্য

স্বাধীনতার জন্য

বাবা আমার, হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল।

 

তারপর,

তারপর যুদ্ধে যুদ্ধে কেটে গেল নয় মাস।

বাবা ঘুরে বেড়ালেন রণাঙ্গন থেকে রণাঙ্গনে

অবশেষে একদিন দেখা পেলেন বিজয়ের।

বিজয়ের রক্তসবুজ পতাকা হাতে

ফিরে এলেন মুক্তিযোদ্ধারা।

আনন্দ ঠিকরে পড়ছে সবার চোখমুখ থেকে।

সেকী উল্লাস! সেকী আনন্দ!

 

সবাই ফিরে এলেন, কিন্তু বাবা ফিরে এলো না।

সবাই তখন স্বাধীনতার স্বর্ণঈগল

বাক্সবন্দী করায় ব্যস্ত।

আমি বাবাকে তালাশ করলাম, পেলাম না।

আমি স্বাধীনতা তালাশ করলাম, পড়শীরা বললো, ওটা তোমার বাবার কাছে।

 

সেই থেকে আমি বসে আছি এ নদীর ঘাটে।

কবে বাবা ফিরবেন? করে ফিরবে স্বাধীনতা?

 

কিন্তু হায়!

বাবা যে আর আসে না। স্বাধীনতাও আসে না।

মুক্তিযোদ্ধারা হাতের অস্ত্র জমা দিয়ে ফিরে গেল যে যার পেশায়।

এ সুযোগই কাজে লাগালো কুচক্রী মহল।

কিভাবে মুক্তিযুদ্ধ করতে হয় দেখেনি যারা,

তারা এসে দখল করলো রাজফটক।

স্বর্ণঈগল পাখা মেললো শূন্যে।

দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল স্বাধীনতা।

বাবাও ফিরে এলো না।

ফিরে এলো না স্বাধীনতাও।

 

বাবা তুমি ফিরে আসো।

নিয়ে এসো আমার কথা বলবার স্বাধীনতা।

নিয়ে এসো সেই শোষণহীন সমাজ।

নিয়ে এসো সেই বৈষম্যহীন রাষ্ট্র।

নিয়ে এসো সেই স্বৈরাচারহীন সরকার।

নিয়ে এসো অবাধ গণতন্ত্র।

নিয়ে এসো স্বাধীনতা।

 

কী এক অদম্য আশা ও স্বপ্ন নিয়ে নিয়ে

আজও বসে আছি নদী তীরে।

আমি আর কতোকাল এভাবে

নদী তীরে বসে থাকবো?

বাবা কি আসবে না? স্বাধীনতা আসবে না?

০৭/১২/২০১৯-বিকেল ৩টা

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.