একটি কাল্পনিক গল্প - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ১৮৭
কবিতা-১৮৭ : একটি
কাল্পনিক গল্প
এ আমি কী দেখলাম!
এসব তো ঘটে সেলুলয়েডের ফিতায়।
একটা বালক দৌড়াতে দৌড়াতে যুবক
হয়ে যায়।
একজন মানুষ দৌড়াতে দৌড়াতে
ভয়ংকর বাঘ হয়ে যায়।
যুবতী নারী মাথার ওপর বিশেষ ভঙ্গিতে
হাত তুলে মুহূর্তে সাপ হয়ে যায়।
হ্যাঁ, এগুলো
সিনেমাতেই ঘটে, ঘটা সম্ভব।
যদিও এটা বিরল ঘটনা, তবু
শুনেছি,
আশির দশকে রাজশাহী
বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ছেলে মেয়ে হয়ে গিয়েছিল।
সাপ্তাহিক বিচিত্রায় পাশাপাশি
মেয়েটির ছবি ও আগের ছবি দিয়ে
কভারস্টোরি করেছিল।
এরকম অদ্ভুত ঘটনা মাঝে মাঝে ঘটে,
ঘটা সম্ভব। কারণ আল্লাহ যা ইচ্ছা
করেন
তাই করতে পারেন।
এসব তারই আলামত।
কিন্তু এটা কি?
এ আমি কী দেখলাম!
বাড়ির কেউ একজন 'চোর চোর' বলে
চিৎকার করে উঠলো।
সে চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেল বাড়ির
সবার। আমরা দরজা খুলে লাঠি হাতে
উঠোনে নেমে এলাম।
মনে হলো, ছাইরঙ
অন্ধকার ভেদ করে
একটা গভীর কৃষ্ণ অন্ধকার পালিয়ে
যাচ্ছে।
আমরা যদিও স্পষ্ট কিছু দেখতে
পাচ্ছি না, তবে পায়জামার রঙ সাদা হওয়ায় বুঝতে পারছি, আঁধারের ফাঁক দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে
একটা পায়জামা।
আমরা পাজামার পিছনে ধাওয়া করলাম।
চিৎকার করে ডাকতে লাগলাম পড়শিদের।
চিৎকার শুনে অনেকেই বেরিয়ে এলো।
ওরাও পিছু নিল আমাদের।
দৌড়াচ্ছে পাজামা, পেছনে
লাঠিহাতে আমরা।
দৌড় দৌড়।
দৌড়াচ্ছে পাজামা, দৌড়াচ্ছি
আমরা।
আমাদের অনুসরণ করছে
আকাশের ক্ষীয়মান চাঁদ।
তারার ঘোলা চোখ।
আমাদের হৈহল্লায় জেগে উঠছে
গ্রামের পর গ্রাম।
তারাও পিছু নিচ্ছে আমাদের।
বাংলাদেশের এমন কোন গ্রাম নেই,
যে গ্রামে আমাদের পা পড়েনি।
পাজামা দৌড়ায়,
তাকে তাড়া করে দৌড়াই
আমরা কতিপয় চোর তাড়ানিয়া।
অবশেষে দৌড়াতে দৌড়াতে কী যে হলো, চোরের
বাতাস লেগে আমাদের দেহগুলোও চোর সদৃশ হয়ে গেল।
আমাদের মনগুলোও চোর সদৃশ হয়ে
গেল।
আমাদের পরণেও সাদা পায়জামার ওপর
কৃষ্ণ অন্ধকার জমা হলো।
এটাও নাকি হয়।
ঘৃণা করতে করতে একদিন ঘৃণার
সাথেই ভালবাসা হয়ে যায়।
ধর্ষণরোধ যাদের দায়িত্ব তারাই
হয়ে যায় ধর্ষক।
ঘুষ ও সুদ বাণিজ্য বন্ধে যারা
নিয়োজিত
তারা ঘুণেপোকার মত চুষে চুষে খায়
গরীবের রক্ত ও ঘাম।
পাপের প্রতি যাদের ছিল তীব্র
ঘৃণা,
দেখতে দেখতে পাপ তাদের কাছে
সহনীয় হয়ে যায়, সেই
মানুষগুলোই পরে
পাপ হজম করতে শিখে যায় অবলীলায়।
একদিন পাপের সাথে তাদের প্রেমও হয়ে যায়।
যে যুবকরা আগে একে অপরকে
আছরের নামাজের জন্য ডাকতো,
তারা নিজেরাই এখন ফুটবল খেলায়
মত্ত।
অবশ্যই আপনি বলতে পারেন,
এটা মানুষের এক দুর্লভ গুণ।
মানুষ সহজেই সবকিছুর সাথে নিজেকে
মানিয়ে নিতে পারে। হ্যাঁ,
হয়তো ঠিক।
মানুষই মানিয়ে নিতে পারে সময়ের
সাথে,
সমাজের সাথে, পরিবেশের
সাথে।
তখন পাপ আর পাপ থাকে না,
পাপ হয়ে যায় গরম চায়ের কাপ।
মানুষকে খারাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে
রাখা
ইমামদের পবিত্র দায়িত্ব। এখন
দেখি, ইমামদের সাদা পাঞ্জাবিতে রঙিন বোতাম।
সবই সহনীয় হয়ে যায়।
ময়লা পরিষ্কার করতে গেলে
হাতে তো ময়লা লাগবেই।
মিথ্যা বলা হারাম বুঝাতে গিয়ে
যদি
নতুন গল্প বানানো লাগে
আলেমরা কি ইসলামের স্বার্থে
সে গল্প বানাবে না?
এভাবেই সব একদিন সহনীয় হয়ে যায়।
চোর তাড়াতে গিয়ে আমরা পায়জামার
পিছনে ছুটতে শুরু করেছিলাম।
কিন্তু কোথায় চোর? কে চোর?
তাকিয়ে দেখি, আমাদের
সবার পরণেই সাদা পায়জামা, তার ওপর
কৃষ্ণ অন্ধকারের চকচকে পোস্টার।
কেউ একজন চিৎকার করে বললো, তবে কি
চোরের পিছনে ছুটতে ছুটতে আমরাও চোর হয়ে গেলাম?
বাতাসে বার বার এ শব্দ ধ্বনিত
হলো,
তবে কি চোরের পিছনে ছুটতে ছুটতে
আমরাও চোর হয়ে গেলাম?
এটাই ছিল মানবতার অন্তিম কান্না।
কিছু কিছু মানুষ চিরকাল মানুষই
রয়ে যায়।
কিছু মানুষ সময়ে পশু হয়।
কিছু মানুষ লোভ ও লালসার আগুন
দিয়ে
সমাজকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার
করে।
কিছু মানুষ সাদা পাজামার পিছনে
ছুটতে গিয়ে নিজেরাই পাজামা হয়ে যায়।
আমরা সে অচেনা জায়গায় দাঁড়িয়েই
চারদিকে তাকালাম। দেখলাম,
সেখানে কোন বাড়িঘর নেই, জনপদ নেই।
গ্রাম নেই, গঞ্জ
নেই, শহর নেই।
সামনে এগুবার পথও নেই।
একটা পাহাড়ি বনাঞ্চল।
সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা ভাবছি আর
দেখছি চারপাশের নগ্ন প্রকৃতি।
আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, এরই
মধ্যে আমাদের
ঘিরে ফেলেছে কতিপয় বন্য পশু।
তারা ধীর পায়ে এগিয়ে আসছে আমাদের
দিকে।
ক্রমেই তাদের সংখ্যা বাড়ছে।
আমরা ওদের দেখতে পাচ্ছি।
ওরাও আমাদের দেখছে।
আমরা বিভিন্ন পশুর বিচিত্র কন্ঠ
শুনতে পাচ্ছি।
ক্রমে সে কন্ঠ উর্ধমুখী হচ্ছে।
পশুদের বিকট গর্জনে সয়লাব হচ্ছে
বনভূমি।
আমরা শুনছি।
আহ, কি বিকট
গর্জন।
শুনছেন?
আপনারা কি শুনতে পাচ্ছেন?
আমরা ওদের বললাম, তোমরা?
তোমরা কি চাও এখানে?
সেই পশুদের পক্ষ থেকে আওয়াজ এলোঃ
স্বাগতম হে নতুন অতিথি। স্বাগতম।
এসো তোমাদের বুকে জড়িয়ে ধরি।
আমাদের পোষাক না পরেও তোমরা আমাদের চেতনা, মেধা ও মনন যেভাবে প্রয়োগ করেছো, তাতে
আমরা মুগ্ধ, অভিভুত, বিস্মিত।
তোমাদের জানাই পাশবিক অভিনন্দন।
এখন থেকে আর তোমাদের জীর্ণ পাজামা পরতে হবে না। খুলে ফেলো মনুষত্বের জীর্ণ পোশাক।
এই নাও যার যার পশুকীয় বর্নাঢ্য পোষাক। সবাই সমস্বরে বলো জয় পাশবিকতা।
জয় পাশবিকতা। জয় পাশবিকতা।
সেদিন থেকে আমি আমার স্বদেশ
খুঁজে পাচ্ছি না।
বাড়ি খুঁজে পাচ্ছি না।
আপনারা কি কেউ রসুলপুর চেনেন? যেখানে
আমার বাড়ি। যেখানে থাকে আমার প্রিয়জন।
আমি বাড়ি যেতে চাই।
আমি বাড়ি যেতে চাই।
২৮/০৭/২০২০ ৫টা
অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
No comments