যুগলবন্দী উচ্ছ্বাস - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ০৭২
কবিতা-০৭২ :
যুগলবন্দী উচ্ছ্বাস
কে বলেছে, ধর্মে ধর্মে যুদ্ধ হয়?
না, ধর্মের কাছে গেলে মানুষ শুদ্ধ হয়।
ধর্মের কাছেই মানুষ শেখে স্নেহ
প্রীতি মমতা।
যুদ্ধ করে সেইসব লোভী মানস,
যারা শক্তি, দাপট ও ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে গেছে।
যুদ্ধ করে স্বার্থের সাথে
স্বার্থ।
লোভের সাথে লোভ।
ক্ষমতার সাথে ক্ষমতা।
দম্ভের সাথে দম্ভ।
যুদ্ধ মানে দুর্বলকে নিঃশেষ করে
সবলের উত্তরণের ক্রমাগত প্রচেষ্টা।
সকল ধর্ম মানুষকে শেখায় দয়া মায়া
ও প্রেম।
আর লালাসিক্ত বেনিয়ারা মানুষকে
যুদ্ধ এবং রণের জন্য উস্কানী দেয়।
লোভের লকলকে আগ্রাসী জিভের ডগায়
তখন ঝুলে থাকে যুদ্ধ ও দাঙ্গা।
শক্তির দাপটের নিচে পড়ে থাকে
মুমূর্ষ মানবতা আর হিংসার আগুন। সে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়,
বিপন্ন বস্তি ও কোলাহল মুখরিত
জনপদ।
ধর্ম বলে থামো, থামো।
পাশবতা বলে, না, আমার চাই আরো শস্য,
চাই উর্বর ভূমি ও অগণন সম্পদ।
মানুষ নয়, আমার চাই পর্যাপ্ত গবাদি পশু।
কে এখানে ধর্মের বাণী শোনায়?
কে বলে মাখাও মায়ার অঞ্জন?
কে বলে, হৃদয়ের উর্বর মাঠে লাগাও
প্রেমের রঙিন পুষ্পরাজি?
দানবতা হেসে কয়, কোথায় পাবে প্রেম?
আমার গোলায় আছে হিংসার অনল।
ঘৃণার স্তুপীকৃত বারুদ নেবে? নাও।
তখন পিলখানা থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা
বেরিয়ে বলে, আমাকে চেনো না? আমি
গুজরাটের গণহত্যা, দিল্লীর জ্বলন্ত মসজিদ, ড্রেনে পড়ে থাকা লাশ, আর ঢাকার শাপলা চত্বরে পড়ে
থাকা হাফেজ অলিউল্লাহর তরতাজা রক্ত।
অসহায় মানুষ চিৎকার করে বললো, ধর্ম, তুমি কই?
দিল্লীর মুসলিম পল্লীর বাইরে
দাঁড়িয়ে থাকা একদল হিন্দু যুবক বললো, আমরা এখানে।
বিপর্যস্ত মানবতা ব্যান্ডেজ
করছি।
ইতিহাস থেকে বেরিয়ে এলেন মোঘল
সম্রাট শাহজাহান, সম্রাট আকবর, চিতোরের
রাণী, চাঁদ সুলতানা ও লক্ষ্মীবাঈ।
বললেন, ধর্মকে তো আমরা ভারতবর্ষেই ঘুম পাড়িয়ে রেখে এসেছিলাম।
কোলকাতার মমতা বানার্জী বললেন, ধর্ম খুঁজছো? আমার ডেরায় এসো। দেখো, আমি কিভাবে হিংসা, ঘৃণা ও অহংকারকে পুড়িয়ে ছাই করে
বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছি।
আমি সে ছাইয়ের পেছনে দৌড়াতে গিয়ে
এক বিজন চরে পৌঁছে গেলাম। চরের ফুরফুরে হাওয়া আমার হাত ধরে বললো, ধর্ম খুঁজছো?
তাকিয়ে দেখো, উন্মাতাল জোসনায় সবুজ ঘাসের ওপর বসে থাকা যুগলবন্দী,
তাদের অন্তর্গত উচ্ছ্বাসের নাম
ধর্ম।
ধর্ম হচ্ছে নির্ভরতার আঁচলে
জড়িয়ে রাখা প্রত্যাশার মায়াবী হাত।
চলো, তাদের সাথে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেই।
১২/০৩/২০২০ ৬টা
অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
No comments