তুমি কি ফিরবে না - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ০৯৯
কবিতা-০৯৯ : তুমি
কি ফিরবে না
আমার আফসোস, আমরা এক প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুন্ডের ওপর বসে আছি। এ আগুন আমাদের নষ্ট হাতের
কামাই।
আমরা সুখেই ছিলাম।
ছোট একটা সংসার ছিল।
বাপ মা ছিল। ভাইবোন ছিল।
তাদের সাথে কোলাকুলি ও কিলাকিলি
করতাম।
আমরা সুখেই ছিলাম। আমাদের সংসারে চাঁদবদনী সুফিয়া ছিল।
তার ঠোঁটে হাসি ছিল। চোখে
তৃপ্তির অঞ্জন ছিল।
আমরা সুখেই ছিলাম। আমাদের কোলে
ছিল দুটি পূর্ণিমা চাঁদ। ছোট একচিলতে উঠোন। উঠোনের পাশে সব্জি বাগান। বাগান ভরা
ছিল এক সাগর সুখ। অথৈ শান্তি।
ভালই ছিলাম আমরা। আমাদের প্রভু
আমাদের কোন কিছুই কম দেননি।
একদিন আমাদের মনে লোভ এলো।
বিচিত্র অতৃপ্তি এলো।
পুঁজির মোহ এলো।
নানাবিধ কামনা এলো।
বাসনার পাখনা গজালো।
মনের ভেতর ঢুকে গেল ইবলিশ। বললো
এই নাই, ওই নাই।
প্রকৃতি অবিকল আগের মতই থাকল।
শুধু আমাদের অন্তরে এসে বাসা বাঁধলো হাহাকারের পোকা।
অতৃপ্তির অদৃশ্য আগুন।
একদিন আমরা অনুভব করলাম, আমরা বন্দী হয়ে আছি লোভের খাঁচায়। চাহিদার ঘেরাটোপে। আকাঙ্খার শেকলে। আমরা
হারিয়ে ফেললাম সুখের ঠিকানা। ছিটকে পড়লাম
জাগতিক জান্নাত থেকে।
এই লোভই আমাদের কাল হলো।
আমরা ঘর ছেড়ে বাইরে বেরোলাম।
আমাদের নফস আমাদের বানালো
বহুগামী। আমরা পরকিয়ায় লিপ্ত হলাম। বাগানবাড়ি বানালাম। নাইটক্লাব বানালাম। ভোগের
আকর্ষণে ঘর ছাড়লাম।
ভুলে গেলাম চাঁদবদনী সুফিয়ার
কথা।
সম্পদের মোহ আমাদের বানালো গাধার
চাকর।
আমরা ঘুষ খেতে শিখলাম, চুরি করতে শিখলাম। সুদখোর হলাম।
ডাকাত ও ছিনতাইকারী হলাম।
এই করতে করতে সেই যে ঘর থেকে
বেরোলাম, এখন ঘরে ফেরার সময়ই হয় না আমাদের।
আমার পূর্ণিমা চাঁদ দুটো বাবার
সঙ্গ পায় না। আমি আর চাঁদ দেখি না, জোসনা দেখি না।
সুখ হয়ে গেল সুদুরের তারা।
পূর্ণিমা চাঁদ দুটো স্নেহের অভাবে হয়ে গেল শুকনো পোড়া রুটি। হায়রে লোভ!
লোভ আমাদের তাড়িয়ে বেড়ালো। আমরা
ছুটলাম মরিচীকার পেছনে। আলোহীন আলেয়ার পেছনে।
ছুটতে ছুটতে ছুটতে ছুটতে আমরা যে
কোথায় যাচ্ছি তাই ভুলে গেলাম।
বাপ মাকে ওল্ডহোমে পাঠিয়ে দিলাম।
আমাদের ঘরগুলো জাহান্নাম হয়ে
গেল।
আমরা নীতিনৈতিকতা ভুলে গেলাম।
ভালবাসা ভুলে গেলাম।
মায়া মমতা ভুলে গেলাম।
শ্রদ্ধা ভক্তি ভুলে গেলাম।
ভুলে গেলাম আমি কে?
কেন আমাকে বানানো হয়েছে? আমার কাজ কি? দায়িত্ব কি?
সব সব ভুলে গেলাম।
আমি যে মানুষ তাও ভুলে গেলাম।
এভাবেই কাটতে লাগলো দিনগুলো, রাতগুলো। আমরা ছুটে বেড়াচ্ছি লোভের পাগলা ঘোড়ায় চেপে।
ঘরে চাঁদবদনী সুফিয়ার বালিশ ভিজে
যায় বেদনার জলে।
পূর্ণিমা চাঁদ দুটো বখে যায়।
মুরুব্বিরা বুঝাতে গেলে বলে পাপ
কি?
আহা, আমার সন্তানরা এখন পাপ পূণ্য বুঝে না, ভালমন্দ বুঝে
না, আলো এবং অন্ধকারও বুঝে না।
তারা বুঝে না আগুনেরও ধর্ম আছে, বাতাসেরও ধর্ম আছে।
পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী ও বস্তুর
রয়েছে আলাদা আলাদা ধর্ম।
আলাদা জীবন প্রনালী, আলাদা বিধান।
যখন কেউ তার নির্ধারিত বিধান
ছেড়ে অন্য পথ অবলম্বন করে সেটাই হয় অধর্ম। সেটাই পাপ। আর ধর্মের পথে অবিচল থাকাটাই
পূণ্য।
যতোই লোভ বাড়ছে ততোই বাড়ছে অধর্ম
ও পাপ।
ততোই বাড়ছে হিংসা ও ঘৃণা।
ততোই বাড়ছে নিষ্ঠুরতা ও
অমানবিকতা।
সূর্য যদি তাপ বিকিরণ না করতে
পারে তবে সে সূর্য নয়।
চাঁদ যদি জোসনা না বিলায় সে চাঁদ
নয়।
আগুন যদি দাহ্যগুণ হারিয়ে ফেলে
সে আর আগুন থাকে না।
মানুষ যদি ভালবাসাটাই রপ্ত করতে
না পারে তবে সে মানুষ থাকে না।
তখন মানুষ হয় পশু, কখনো পশুরও অধম।
তখন মানুষই সাজে বিতাড়িত শয়তান।
মানুষ তখন মানুষ মারার ফন্দি
আঁটে।
মানুষই বানায় মানুষ মারার
অস্ত্র।
ভুলে যায় সে আশরাফুল মাখলুকাত।
সৃষ্টির সেরা জীব।
তার ভোগের জন্যই বানানো হয়েছে
তামাম আলম। তাকে বানানো হয়েছে খলিফা।
এই দায়িত্ব ভুলে যাওযার নামই
অধর্ম।এরই নাম পাপ।
এরপরও কি তুমি তোমার স্বভাবধর্মে
ফিরে আসবে না?
২২/০৫/২০২০ ৯টা
অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
No comments