অলৌকিক জোসনা পালকি! - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ১০০
কবিতা-১০০ :
অলৌকিক জোসনা পালকি!
মানুষ জানে মিথ্যে কথা বলতে নেই।
কিন্তু সব সত্যি কথাও যে বলতে
নেই,
এটা অনেকেই জানে না।
তোমাকে কত বার বলেছি, গ্লাসটা অর্ধেকই খালি, একথা বলো না।
এতে হৃদয়ের ভেতর একটা শূন্যতা
হাহাকার করে ওঠে।
অতৃপ্তির একটা বেদনা চিনচিন করে
বুকের ভেতর। কী লাভ অযথা বেদনা জাগিয়ে?
তোমার এ অতৃপ্তি তোমাকেই কষ্ট
দেয়।
সুখের বদলে মনের ভেতর বেজে ওঠে
অসুখের ভায়োলিন।
জীবন তো ক্ষণিকের। মনে করো,
জাহাজের অপেক্ষায় ঘাটে বসে থাকার
মতো।
একটু পরই জাহাজ আসবে।
সেই জাহাজে করে তুমি ফিরবে নিজের
বাড়ি।
আবারও মিলিত হবে স্বজনদের সাথে।
এভাবে ভাবো, দেখবে তৃপ্তিতে ভরে যাবে বেদনার নীলাকাশ।
কল্পনায় দেখতে পাবে প্রিয়জন।
তোমার ভাবনাটা যে অসত্য নয়, তা আমিও জানি। তবে ভাবনাটা নেগেটিভ।
এই নেগেটিভ ভাবনাটাই জীবনকে
বেদনাময় করে তোলে।
জীবনের খেলাঘরকে ভরিয়ে দেয় অসীম
দুঃখবোধে।
মনে হয়, জীবনের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে অনাহূত ঘূর্ণিঝড়, উড়িচরের
জীবনঘাতি জলোচ্ছাস।
তাই বলছিলাম, তোমাকে জীবনদৃষ্টি পাল্টাতে হবে।
দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাও, জীবন বদলে যাবে।
হ্যাঁ, দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাও, জীবন বদলে যাবে।
ভাবো, এখনো গ্লাসভরা আছে অর্ধেক জলে।
এ জল তোমার পিপাসা মেটাবে। দেখবে, এতেই নিভে গেছে অতৃপ্তির বেদনার আগুন।
দেখবে, অতৃপ্তির মহাদেশে চোখ মেলে তাকাচ্ছে আশার অজস্র নবীন মহীরুহ।
বৃক্ষের কোল জুড়ে বসে আছে অসংখ্য
সুখপাখি।
দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাও, জীবন বদলে যাবে।
দুঃখের নদীতে ভাসবে সুখের
সাম্পান।
যখনই অন্ধকার আসবে, মনের আকাশ ভরে যাবে পূর্ণিমা চাঁদে।
ফুটবে তারাফুল।
কুসুমিত জোসনায় তুমি আমার হাত
ধরে বলবে, চলো, হেঁটে যাই যতদূর
মন চায়।
কী লাভ বলো অযথা বেদনা জাগিয়ে?
দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাও, জীবন বদলে যাবে।
তুমি মরণকে ভয় পাও। কেন?
মৃত্যুকে এতো ভয় পাওয়ার কী আছে?
কোথায় মরণ?
মানুষতো মরেও না, জন্মও নেয় না।
বাড়ি যাওয়ার পথে পরিবহণ পাল্টায়।
কখনো মায়ের পেটে, কখনো পৃথিবীর ঘাটে।
তুমি ঘুমাও না?
ধরো, এ অন্য রকম ঘুম। অনন্ত ঘুম।
ঘুম ভেঙে তুমি দেখবে, জাহাজ ভিড়ে আছে বাড়ির ঘাটে।
স্বজনরা এসেছে তোমাকে রিসিভ
করতে।
আর তুমি ঘুম ভেঙে কচি শিশুর মতই
কেঁদে উঠবে মায়ের কোলে।
বলবে, আফসোস, যদি আমি বুঝতাম!
যদি তোমার মত বলতাম, এ গ্লাসটা অর্ধেক ভরা। তাহলে জীবন কতই না আনন্দময় হতো!
আমার পৃথিবী ভরা থাকতো ছি কুতকুত
সুখে।
বেলীফুলের হাসি আমিও হাসতে
পারতাম।
বুঝতে পারতাম, ইতিবাচকতার বৃষ্টি না হলে বৃক্ষও সবুজ হয় না।
ভেবে দেখলাম, পৃথিবীতে কোথাও কোন কষ্ট নেই।
যতো কষ্ট সবইতো দেখি মানুষের
বুকের পাঁজরের নিচে।
হায়! জীবন খুঁড়ে কে বেদনা জাগাতে
চায়!
পুষ্পকানন রেখে কে যায়
মরুবিয়াবানে?
আমি কাঁদি। কারণ, আমি বারবার ভুল জাহাজে চড়ি। তোমার কথাই ঠিক, নেতিবাচক
হবার কারণে আমি বারবার পরাজিত হই, হেরে যাই। জীবনকে বারবার
ভাসিয়ে দেই অনন্ত দুঃখস্রোতে। আর তুমি?
একই ছাদের তলে বাস করে কী করে যে
পেয়ে যাও অদৃশ্য পুষ্পের সুগন্ধি রুমাল। অনন্ত গতিময় জ্যোতির বোররাক!
মৃত্যুর বদলে পেয়ে যাও অন্যরকম
ঘুম! জোসনার পালকি!
আহ, জোসনার পালকি!
হায়, শুধু যদি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে পারতাম।
শুধু যদি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে পারতাম।
হায়, শুধু যদি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে পারতাম।
তবে আমার দরোজায়ও দাঁড়িয়ে থাকতো
অলৌকিক জোসনা পালকি!
২৭/০৫/২০২০ ৮টা
অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
No comments