চোখের চন্দ্রিমা - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ০৩৪

                           

কবিতা-০৩৪ : চোখের চন্দ্রিমা

হে আমার আল্লাহ!

আমার একি হাল হয়েছে?

মাত্র তো দুটো চোখ।

সেই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আমার পুরো একটা জীবন পার করে দিলাম!

হে আল্লাহ, চোখও এতো সুন্দর হয়?

 

মানুষ আমাকে ফুলের দিকে তাকাতে বলে।

রাতের মোলায়েম জোসনার দিকে তাকাতে বলে।

চাঁদের দিকে তাকাতে বলে।

কিন্তু আমি পারি না। ওই চোখের সৌন্দর্যের কাছে সবই যে ম্লান হয়ে যায়।

 

এখন আমি বুঝতে পারি, পারস্যের কবি হাফিজ দুটো চোখের বদলে কেন সমরকন্দ ও বোখারার মত সমৃদ্ধ দুই শহর বিলিয়ে দিতে চেয়েছিল।

কবি জীবনানন্দ দাস কোন চোখ দেখেছিল নাটোরের বনলতা সেনের অবয়বে। মজনু তো লাইলীর জন্য পাগল হয়নি, হয়েছিল লাইলীর চোখের জন্য। আসলে সে এমনি এক চোখ, যার দিকে তাকালেই মানুষ কবি হয়ে যায়।

 

তুমি যদি বলো, একদিকে দুটো চোখ আর দিকে সমগ্র পৃথিবী, তুমি কী নেবে?

আমি অবলীলায় পৃথিবী ফেলে দু চোখ আকড়ে ধরবো বুকে।

 

সামান্য দুটো চোখ। অথচ কী অদ্ভুত তার সম্মোহন!

সমস্ত বিশ্বের চেয়ে তা দামী ও আকর্ষণীয় মনে হয়।

ওই চোখের চাহনী দেখলে মনে হয়

চকচকে দুই অমৃত বল্লম আমার বুকের পাঁজরে গেঁথে আছে।

 

ওই চোখের দিকে তাকালে

মিটে যায় সব ক্ষুধা ও তৃষ্ণার অনুভূতি।

মিটে যায় সব আকাংখা, স্বপ্ন ও সাধ আহলাদ।

ওই দৃষ্টির সামনে হার মানে বজ্রবিদ্যুৎ।

 

নদীর কলতান, ঝর্ণার গান, পাখির কাকলী

সব কেমন ফিকে হয়ে যায় সে চোখের বিদ্যুৎঝলকে। ঝলমল করে ওঠে সুখের ঝর্ণাধারা, আনন্দের জড়োয়া হাউস।

 

আমি তন্ময় হয়ে তাকিয়ে দেখি।

তুমি বলো,কী দেখো? আমি বলি, আল্লাহর মনোরম সৃষ্টি।

যদি এ চোখ দুটি সৃষ্টি না হতো পৃথিবী অন্ধ হয়ে যেতো। আকাশ ও সমুদ্র তার বিশালতা হারিয়ে ঢুকে যেতো অনন্ত অন্ধকারে।

 

অন্ধকার?

তোমার চোখের কাজলের নাম।

যার তলদেশের ত্রিশলক্ষ সমুদ্র আমাকে ডাকছে।

তোমরা যাকে চোখ বলছো,

সে আসলে চোখ নয়, অনন্ত দুই বেহেশত আমার দৃষ্টির সামনে তার রূপলাবন্য মেলে ধরেছে।

 

প্রভু, এক জনমে সামান্য দুটো চোখের সৌন্দর্য দেখে শেষ করতে পারলাম না, অবশিষ্ট সৃষ্টিজগত কখন দেখবো? আল্লাহ, আমাদের মাফ করে দাও।

মানুষের কি সাধ্য আছে

তোমার প্রশংসা করে শেষ করে!

০৬/০৫/২০১৮  সাড়ে ৩টা

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.