আমরা এসেছি ভালবাসতে - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ০৬২

                                                       

কবিতা-০৬২ : আমরা এসেছি ভালবাসতে

মাকসুদা, প্রিয়তমা আমার!

তোমার ঈমানের তাজাল্লি যেনো এভাবেই আমাকে জাগিয়ে রাখে। এক অপার্থিব

রাজপ্রাসাদে যাবো বলে একদিন ভোররাতে

সেই যে পথে নেমেছিলাম আর আমি থামিনি।

 

বারবার সূর্য এসে বলেছে, আর কতদূর?

আমি বলেছি, তা দিয়ে তোমার কি দরকার?

চন্দ্র এসে বলেছে, যুবক, খানিক জিরিয়ে নাও। বসো কাছে।

বিরতিহীন পথিক আমি বলেছি, চুপ করো।

 

তুমি জানো না, কোথাও থামার অনুমতি নেই আমাদের?

আমরা শুধু চলতেই জানি।

আমাদের বলে দেয়া হয়েছে, আমাদের অনিশেষ যাত্রার শেষ মনজিলের নাম জান্নাত।

আমাদের পথের নাম সিরাতুল মুস্তাকিম।

পৃথিবীর সামান্য পর্বতশৃঙ্গ জয় করার জন্য আমরা পথে নামিনি।

 

কিন্তু স্বার্থপর পতঙ্গকূল এটা বুঝতে পারেনি।

তারা ভেবেছে, বরফের মত নিঃস্ব হয়ে যায় যে লোভের পাহাড়, তারই পিছনে ছুটে চলেছি আমরাও।

পচনশীল খাদ্যদ্রব্য, ক্ষয়িষ্ণু পাথর, বিলীয়মান ঐশ্বর্য, এসব জমা  করাই আমাদের টার্গেট।

আমরাও তাদের মতো লবনের পাহাড় দখল করতে চাই।

 

তাই বার বার তারা আমাদের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দিতে চেষ্টা করেছে।

ভেবেছে, আমাদের নিঃশ্বেষ করা এমন আর কী কঠিন!

কিন্তু আমাদের যে থামানো যায় না, নিঃশ্বেষ করা যায় না, তা ইতিহাস হয়ে আছে।

 

আমাদের ধাওয়া করতে এসে ডুবে মরেছে ফেরাউন ও তার বাহিনী। নমরুদের আগুন আমাদের পোড়ায়নি

এসব পুরনো কাহিনী নাইবা বললাম।

এইতো সেদিনের কথা।

আবরাহার হস্তিবাহিনী কি আমাদের মারতে এসে নিজেরাই লাশ হয়ে যায়নি?

বদর প্রান্তরে যে পঙ্গপাল ছুটে এসেছিল আমাদের ক্ষুদ্র কাফেলা নিঃশ্বেষ করতে, তাদের পরিনতি কে না জানে? তাহলে?

 

বদরের শহীদেরা কি পরাজিত হয়েছে?

না, হয়নি।

শাহাদাত আমাদের পরাজয় নয়, বয়ে আনে চূড়ান্ত  বিজয়।

কারাবন্দী ইউসুফরা কি পরাজিত হয়?

কার ওপর জুলুম করো নাদান জালিম?

কারে দেখাও মৃত্যুর ভয়?

 

আমরা দেখেছি, শিবে আবু তালিবের কারাগার।

কাবার দেয়ালে আটকানো নিষেধাজ্ঞা নিঃশ্বেষ করার জন্য সামান্য উঁইপোকাই তো যথেষ্ট।

 

না, আমরা নিঃশেষ হই না।

থেমে যাই না।

আমরা চলতেই থাকি।

রাতের অন্ধকারেও আমরা পথ চলি। ঝড়ের রাতেও আমরা এগিয়ে চলি। প্রখর রোদ মাড়িয়ে আমরা এগিয়ে যাই মনজিল পানে।

 

কখনো আমাদের গতি হয় অশ্বের মতো গতিমান, কখনো উটের মতো। দরকার হলে হেঁটে যাই।

গুহায় ওঁৎ পেতে এড়িয়ে যাই দুশমনের ক্যামেরা চোখ।

আমাদের সেনাপতি আমাদের কী শিখাননি?

 

কখনো আমরা বদরের দুরন্ত সৈনিক। কখনো ওহোদের দুঃসাহসী যোদ্ধা। কখনো খন্দকের কুশলী কারিগর।

রক্তপাতহীন যুদ্ধজয় পৃথিবীকে আমরাই শিখিয়েছি।

মানবতা আমরা ছাড়া কে শেখাতো দুনিয়াকে?

 

মাকসুদা!

শিবে আবু তালিবের কথা তো তুমি জানো।

এও এক কাল। পেটে পাথর বেঁধে, গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে আছে মুসলমানরা।

আমাদের নেতা দুই পাহাড়ের মাঝে বন্দী জীবন যাপন করছেন তাঁর সঙ্গী সাথীদের নিয়ে।

আপাততঃ আমি সেই প্রহরগুলো কেমন ছিল, সেটাই একটু পরখ করে দেখছি।

তোমাকে ধন্যবাদ, তুমি শিবে আবু তালিবের এই দুঃসহ সময়েও আমাকে সঙ্গ দিচ্ছো।

 

তোমাকে শুধু এটুকু বলি, এই বিষন্ন নিষ্ঠুর সময় একদিন শেষ হয়ে যাবে। আমরা আবার মক্কা বিজয় করবো। অসভ্য মানুষগুলোকে আমরাই শেখাবো সভ্যতা।

আমাদের হাতে থাকবে ভালোবাসার অমোঘ নিশান।

সেই বুড়িকেও আমরা ভালোবাসা শেখাবো, যে আমাদের চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখতো।

কারণ আমরাতো পৃথিবীতে ভালোবাসতেই এসেছি।

২৫/১১/২০১৯-৭টা

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.