ছাদে যাওয়া প্রয়োজন - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ৩৩০

             

কবিতা-৩৩০ : ছাদে যাওয়া প্রয়োজন

কংক্রিট ও লোহার জালে ঘেরা

দশতলা প্রাসাদের ছাদে বৃষ্টি এলো।

দেয়ালঘেরা ঘরে বৃষ্টি প্রবেশ করতে

পারে না বলে শহুরে মানুষের শরীর ও মন কখনো ভেজে না। তীব্রখরায় তাদের হৃদয় ফেটে চৌচির হয়ে যায়।

 

আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম,

কংক্রিটের শহরে অযথাই বৃষ্টি হচ্ছে।

কী আর করবে?

এখানে তো দুর্বাঘাস নেই।

বৃক্ষের সবুজ পাতা নেই।

সরলতা ও তাজা ঘাসফুলের সুঘ্রাণ নেই।

 

সবটাই মেকি।

সবটাই চটকদার অভিনয়।

সবটাই কপট হাসি। মায়ার মিছে ছলনা।

সেই শহরে ভেজা বৃষ্টি এলো পবিত্রতার হাসি ছড়িয়ে। তুমি পাথর হৃদয়গুলো বদ্ধ ঘরে রেখে চলে গেলে ছাদে, একা একা।

 

বললাম, কই যাও?

বললে, হাসিটা বড্ড ময়লা হয়ে গেছে। ওকে একটু ধুয়ে আনি।

কতকাল বৃষ্টি দেখি না।

শিউলি ফুলের পবিত্রতা দেখি না।

 

কবুতরের ফিটফাট খোপে আমরা কতিপয় হৃদয়হীন মানব

মসজিদুল আকসায় ইহুদীদের পৈশাচিক সন্ত্রাস দেখছি টিভির পর্দায়

ইউক্রেনে বোমা হামলা করেছে রাশিয়া।

ফিলিস্তিনে একটা বহুতল ভবন ধ্বসে পড়ছে তেলআবিবের বিমান হামলায়।

আমরা চায়ে বিস্কিট ভিজিয়ে সেসব দৃশ্য উপভোগ করছি।

 

তুমি ফিরে এলে দীর্ঘ সময় পরে।

মুখটা শিউলি ফুলের মত জ্বলজ্বল করছে। একটা পবিত্রতার দ্যুতি ছিটকে পড়ছে অঙ্গ থেকে।

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।

দেখছি তোমাকে।

 

সত্যি, বৃষ্টি আসে পৃথিবীকে পবিত্র করতে। বনবনানী, মাঠের সবুজ ঘাস, ধূলিমাখা পাখির পালক, বৃষ্টি এসে ধুয়ে দেয় সব মলিন শরীর।

পৃথিবী পবিত্র হয়, সতেজ ও সবুজ হয়। কৃষকের ভেজা শরীর পাপের কালিমা ধুয়ে নির্মল হয় তোমার মতন।

 

শহরের মানুষেরা বৃষ্টিতে ভেজে না। লোমকূপ ভেদ করে পবিত্র পানি প্রবেশ করে না কারো হৃদয়ে।

তাই, তারা হয় নিষ্ঠুর, দয়ামায়াহীন।

লোভের ময়লা জমে জমে তারা অমানুষ হয়ে যায়।

 

মানুষ হতে হলে আমাদেরও ছাদে যাওয়া প্রয়োজন। প্রয়োজন প্রতিটি বৃষ্টিমুখর বর্ষণে। প্রতিটি সকাল ও সন্ধ্যায়, মধ্য দুপুর, এমনকি আলোহীন রাতের অন্ধকারেও।

২০/০৬/২০২৩ বাদ জোহর

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.