না জীবিত, না মৃত - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ১৯৬

                                                                                                    

কবিতা-১৯৬ : না জীবিত, না মৃত

আমি ঠিক জীবিত না মৃত বুঝতে পারছি না।

নাকের কাছে হাত নিলে টের পাই,

নিঃশ্বাস বইছে।

তার মানে আমি জীবিত।

 

জীবিত মানুষ তো তাকালেই সবকিছু

দেখতে পায়।

আমি কি দেখি সবকিছু?

জীবিত মানুষ ইচ্ছে করলেই কথা বলতে পারে।

আমি কি মন খুলে কথা বলতে পারছি?

জীবিত মানুষ কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারে।

আমার হাত পা মুখ সবই আছে।

কিন্তু কোমর তো খুঁজে পাচ্ছি না।

 

মরা মানুষের কোমর নেই।

তারা উঠে দাঁড়াতে পারে না।

আমার তো মেরুদন্ডও নেই। তাহলে? তাহলে কি আমি মৃত?

সন্তানহারা মাবাপ কাঁদতে পারে।

কিন্তু, কিন্তু আমি কাঁদতে পারছি না কেন?

কান্নার জন্য যে সাহস লাগে, আমার সে সাহসটুকুও নেই কেন?

মায়ের পেট থেকে নেমেই শিশু কাঁদতে পারে।

আমি কি নবজাত শিশুরও অধম?

আজকাল ঠিক বুঝতে পারছি না,

আমি জীবিত না মৃত।

একজন মুজিব জেলে গেলে ছাত্ররা

রাস্তায় নামতে পারে,

একজন ভাসানী ফারাক্কার মিছিল করতে পারে, একজন আসাদের লাল সার্ট উল্টে দিতে পারে জালিমের গদী।

আমি ভেবে পাই না, আমি কিছুই পারি না কেন?

জেলখানায় বন্দী শত শত আলেমের কান্না বাতাসে ঘুরে বেড়ায়

অথচ আমি এর কিছুই শুনতে পাই না।

রাজবন্দীদের আত্মা গুমরে মরছে বাংলার আকাশে

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও আমি কেন

বলতে পারছি না,

রাজবন্দীদের মুক্তি চাই

বাঁচার মত বাঁচতে চাই।

শোষকের চামড়া

তুলে নেবো আমরা।

কই, কেউ একজন আসুন। দাঁড়ান।

গর্জে ওঠে বলুন,

আর যদি একটা গুলি চলে, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইলো--

আহ, আমি জীবিত না মৃত?

দোহাই লাগে আপনাদের,

সত্যি করে বলুন, আমি জীবিত না মৃত?

আমার কি জানাযা হয়ে গেছে?

না। আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না, আমি জীবিত না মৃত।

নাকের কাছে হাত নিলে টের পাই,

নিঃশ্বাস বইছে।

তার মানে আমি জীবিত।

তবে কেন আমি একজন মেজরের দুঃসাহস নিয়ে বলতে পারছি না, উই রিভোল্ট?

দোহাই লাগে আপনাদের,

প্লিজ, বলুন না, আমি জীবিত না মৃত?

১২/০৪/২০২২ বাদ ফজর

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.