শব্দের মিসাইল - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ১২৯

                                                                                     

কবিতা-১২৯ : শব্দের মিসাইল

"আমি তোমাদের যে নেয়ামত দিয়েছি

তা স্মরণ করো।"

 

প্রভু, আমি স্মরণ করছি তোমার সেই

বিশেষ নেয়ামত, যা তুমি দিয়েছিলে কবিদের।

এ এমন এক নেয়ামত যার কথা জাতি যুগ যুগ ধরে মনে রাখবে।

 

কী সৌভাগ্য কবিদের!

এই কবিরা তোমার এতই প্রিয় যে,

নবীরা তোমার হাবীব আর কবিরা পোষা ময়নাপাখি।

তোমার পবিত্র ভালবাসা লেপ্টে আছে তাদের আত্মায়।

 

তুমিই আয়াত নাজিল করে আশ শোয়ারা, 'কবিগণ' সম্বোধন করে তাদের সম্মানিত করেছো।

মানুষকে বলে দিয়েছো, হে মানুষ,

কবিরা তোমাদের মত নয়।

তারা আমার বিশেষ নেয়ামতপ্রাপ্ত।

তারা কল্পনাপ্রবণ।

তারা আবেগতাড়িত হয়ে পাহাড়ে পর্বতে ঘুরে বেড়ায়, মনে হয় তারা বিভ্রান্তির উপত্যকায় ঘুরছে।

কিন্তু এ আবেগদীপ্ত মন আমিই তাদের দিয়েছি।

মনে রেখো, যারা ঈমান আনে, সৎকর্ম করে এবং যাবতীয় অন্যায় ও অপকর্মের প্রতিবাদ করে তারা এই বিভ্রান্তদের দলে নয়।

 

তারা ঈমানদীপ্ত কবি।

কল্পনাবিলাস তাদের সম্পদ। ভাবালুতা তাদের অলংকার।

তারা যুগের মুয়াজ্জিন।

 

এই নভোমন্ডল, ভূমন্ডল, আকাশ, পৃথিবী সবই আমার সৃষ্টি।

আমি কবিদের দান করেছি সেই সম্পদ, যা অলৌকিক, অভিনব।

আমি তাদের দিয়েছি সেই হৃদয়,

যা থেকে উৎসারিত হয় কবিতা।

তারা মুহূর্তে সৃষ্টি করতে পারে ভয়ংকর সব শব্দবোমা।

 

তারা হাত বাড়ালেই হাত ভরে যায় অগনিত সুগন্ধি রুমালে।

তারা শব্দ দিয়ে এমন পুষ্পকানন বানায় যা তোমরা অতীতে কোনদিন দেখোনি, যা শুধু কবিরাই পারে।

তারা তোমাদের বুভুক্ষু অন্তর্লোকের ক্ষুধা মিটায় অমৃত চাষ করে।

 

হ্যা, কবিরা ভালবাসা ছড়ায়।

কবিদের অন্তরে লেপ্টে থাকে আমারই দেয়া প্রেমকানন।

এই কবিদের ভালবাসেন আমার হাবীব।

কবিদের ভালবেসে মসজিদে নববীতে বানান কাব্যমঞ্চ।

ভালবেসে গায়ের চাদর খুলে পরিয়ে দেন কবিদের, যাতে মাখা থাকে বেহেশতি আতর।

যুদ্ধে না গিয়েও গনীমতের ভাগ পায় শুধুই কবিরা।

কবিরা এতটাই সম্মানিত, মৃত্যুদন্ড ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পর কবিতার বিনিময়ে দোষী ব্যক্তি ফিরে পায় তার জীবন। তার মানে, একটি কবিতা একটি জীবনের সমান।

 

আমার রাসুল সা. কি তোমাদের বলেননি, কবিদের আর্থিক সহায়তা করা পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার সমতুল্য?

 

তোমরা আমার হাবীবের উম্মত বলে দাবী করো, অথচ রাসুলের সুন্নাতের চাদর শরীর থেকে খুলে নিজেদের ভাবো, পরহেজগার। কী অবাক দুনিয়া।

 

হাসসান বিন সাবিত কে মনে আছে?

জানো তার পরিচয়?

মা আয়েশার রা. নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিলেন যে কবি তিনিই হাসসান।

সেই অপবাদের পর মহানবী সা. মা আয়েশাকে তার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। অসহ যন্ত্রণায় ছটফট করেন নবী দম্পত্তি। দীর্ঘ চল্লিশ দিন চল্লিশ রাত পার হয়ে যায়।

অবশেষে আল্লাহ আয়াত নাজিল করে জানিয়ে দেন, হাসসানের অভিযোগ মিথ্যা। এটা একটা অপবাদ। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দেয়া মা আয়েশা মিথ্যা অপবাদ থেকে বেঁচে যান।

 

জনগণ হাসসানের বিচার দাবী করেন।

মা আয়েশা রা. বলেন, না। সে কবি, জাতির সম্পদ। আমি তাকে মাফ করে দিলাম।

রাসুল সা.ও বলেন, আমিও মাফ করে দিলামতারপর নবী তাকে শায়েরুন্নবী সম্মাননা প্রদান করেন। আল্লাহ তার কবিতায় প্রীত হয়ে রাসুলকে বলেন, হাসসানকে জানিয়ে দাওসে বেহেশতী। তার গুণাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে।

সোবহানাল্লাহ। এই হচ্ছে কবি।

 

আমার মন চলে গেল এক অনিন্দ্য সুন্দর বাগানে, যেখানে ফুলের মত হাসি ছড়িয়ে বসে আছেন কবি আল মাহমুদ। শুনছেন নহরের কলতান। বললেন, চলে এসো কবি।

এখানেই বসবে কবিতার মেলা।

প্রধান অতিথি থাকবেন প্রিয়তম নবী সা.।

হাসসান থাকবে প্রধান আলোচক।

 

হে দুনিয়াবাসী, শোন।

কবিরা হচ্ছে সভ্যতার ফুলবাগানের

এক একটি সতেজ বৃক্ষ।

কবিতা হচ্ছে ফুল।

যিনি কবিদের মালিক তিনি কবিদের ভালবাসেন।

তিনি কবিদের কথা মনযোগ দিয়ে শোনেন এবং প্রার্থনা মঞ্জুর করেন।

 

পবিত্র শুক্রবারে আল্লাহর মেহমান হওয়ার আবদার জানিয়েছিলেন কবি আল মাহমুদ। আল্লাহ তাকে নিরাশ করেননি।

কবি নজরুল বলেছিলেন, "মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই"

আল্লাহ মসজিদের পাশেই তার কবরের ব্যবস্থা করলেন। এসব দেখেও কি বোঝ না, আল্লাহর ভালবাসা কাকে জড়িয়ে রাখে?

 

কে দরবেশ? কে আল্লাহর ওলি?

কবিরাই ওলিয়ে কামেল। কারণ, তাদের সব গুণাহ মাফ করে দেয়া হয়। তারাই সভ্যতার নেতা। আল্লাহ নিজে তাদের গাইড করেন।

 

আফসোস! রাসুল শুঁড়িখানা থেকে কবিদের বের করে নিয়ে এসেছিলেন মসজিদে, আর তার উম্মতরা মসজিদ থেকে কবিদের বের করে পাঠিয়ে দিচ্ছে শুঁড়িখানায়।

 

অথচ তারা জানে না, কবিরা বীর। কবিরা সাহসী। তাদের সাথে থাকেন স্বয়ং প্রভু। কবিরা যখন নবীর অনুসারী হয় তখন দুনিয়ার ক্ষমতাশালীরা চোখে সর্ষেফুল দেখে

এদের ঘায়েল করার জন্যই ছুটে যায় কবিদের ক্রমাগত শব্দের মিসাইল।

 

আর সে মিসাইল থেকে যে পুষ্প বারুদ ছড়িয়ে পড়ে তাতেই উড়তে থাকে শান্তির কোমল কইতর।

তখন আবরাহার হাতি তুষ হয়ে যায় সামান্য আবাবিল পাখির রক্তচক্ষু দেখে।

 

অতএব, কবিদের ভালবাসো।

আকঁড়ে ধরো নবীর সুন্নত।

১৩/০৭/২০২০ ১১টা

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.