করোনা কাল - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ০৮০

                                                                         

কবিতা-০৮০ : করোনা কাল

আমরা অনেক কিছুই দেখলাম।

দেখলাম কুদরতের অবিশ্বাস্য সব খেলা।

তিনি চাইলে কী না করতে পারেন?

তিনি আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরাতে পারেন।

মাটি থেকে উদ্ভিদ ফলাতে পারেন।

মানুষের অন্তরে পাখির মত প্রেমও দিতে পারেন।

কি দেখি নাই আমরা?

 

আমরা কি দেখি নাই পরাশক্তির পেটের ভেতর বসনিয়ার উত্থান? হারজেগোভিনায় রক্তের স্রোত? ফ্রান্সে মানুষের মস্তক দিয়ে ফুটবল খেলা?

আচ্ছা, এরা কি মানুষ ছিল?

 

আমরা কি দেখি নাই, ইসলাম গ্রহণের অভিযোগে হযরত বিলালকে তপ্ত বালুর ওপর দিয়ে হেঁচড়াতে।

এটা ছিল ইতিহাস। আর আমরা দেখেছি, গ্রানাডায় মুসলমানদেরকে মসজিদে ঢুকিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে। সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো বয়ে বেড়ায় তাদেরই উত্তরসূরীরা।

 

কী দেখি নাই আমরা?

চীনের উঁইঘুর মুসলিম নিধনের করুণ কাহিনী আমাদের চোখের সামনেই ঘটেছে। তাদের সে কাহিনী শুনলে মনে হতো, মুসলমানের জন্য এ পৃথিবীটাই একটা বৃহৎ কারাগার, গুয়েনতানামো বন্দীশালা।

 

তাদের সে চিৎকার ও হাহাকার ধ্বনিতে কেঁপে উঠতো পবিত্র আরশ। আমরা হয়তো শুনতে পেতাম না। কিন্তু আমাদের অন্তরগুলো ক্ষতবিক্ষত হতো।

নির্যাতীত অসহায় মানুষের নিদারুণ বিলাপ যেনো বলে ওঠতো, প্রভু, তুমি কোথায়? তুমি কোথায়? বাঁচাও আমাদের।

 

আমরা আমাদের চোখের সামনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের করুণ পরিণতি দেখেছি।

ঘুমন্ত মানুষগুলো পুড়িয়ে মারার দৃশ্য, কচি কচি পুষ্পকলিগুলো দলিত মথিত করে বিনাশ করা, কোনটা আমরা দেখি নাই?

কি দেখি নাই আমরা? বিশ্বব্যাপী মুসলিম নির্যাতন কি আমরা কম দেখেছি?

 

ফিলিস্তিনে যুগের পর যুগ মরুর বালু সিক্ত হতে দেখিনি মুসলমানদের?

অর্ধশতাব্দীরও অধিক কাল ধরে দেখছি কাশ্মীরে কাঠবিড়ালির কমলা খাওয়ার মর্মান্তিক দৃশ্য।

ইউরোপ আমেরিকায় মুসলমানকে কাবাব বানিয়ে খেয়ে যাচ্ছে ধূর্ত সাদা ইঁদুর। কি আমরা দেখি নাই?

 

কী দেখি নাই আমরা?

তোমার প্রিয় বান্দারা যখন নিঃশঙ্ক চিত্তে হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে এগিয়ে গেছে আর তাবৎ বিশ্বে তোমার প্রেমিকরা হু হু করে কেঁদেছে, সে মর্মান্তিক  কাহিনী কি আমরা দেখি নাই?

আমরা কি দেখি নাই শাপলা চত্ত্বরের রক্তপাত ও নায়েবে নবীদের অসহ্য ক্রন্দন?

 

পৃথিবীর এমন কোন দেশ ছিল না, যেখানে তোমার প্রিয় বান্দারা জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়নি। অমুসলিম দেশগুলোতো বটেই, নামধারী মুসলিম শাসকদের নির্যাতন ছিল আরো ভয়াবহ।

কী দেখি নাই আমরা?

 

আফসোস, আমরা ছিলাম অক্ষম, আমরা ছিলাম দুর্বল। তাই সর্বদা আমাদের হাত দুটো তোমার দিকেই তোলা থাকতো।

জানতাম, তোমার ফয়সালাই চূড়ান্ত। তুমি তোমার দুর্বল বান্দাদের ফরিয়াদ শুনবেই।

তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবেই। কিন্তু সেটা কবে তা আমরা বুঝতে পারিনি।

 

তারপর একদিন দেখলাম, তোমার অসহায় বান্দাদের কান্নার আওয়াজ অবশেষে তোমার আরশ মহল্লায় পৌঁছে গেছে।

তুমি ছোট ছোট বিপদ দিয়ে সবাইকে সতর্ক করতে চাইলে।

তুমি বন্যা দিলে। ডেঙ্গু দিলে।

সমাজে লম্পট ও ধর্ষক পাঠিয়ে সমাজকে তছনছ করে দিলে। স্বৈরাচারী শাসক দিয়ে তোমার অবাধ্য বান্দাদের সাবধান করলে।

 

না, তাতেও কাজ হয়নি।

দিলে দাবানল, দিলে পঙ্গপাল।

মানুষ নির্বিকার।

ক্রমেই তোমার গযবের প্রচন্ডতা বাড়তে লাগলো।

এরপর এলো ভয়ংকর সেই মহামারী, করোনা।

এই করোনায় তোমার প্রিয় সৃষ্টি মানুষ মারা যাচ্ছে দলে দলে।

বিরাণ হচ্ছে জনপদের পর জনপদ।

প্রভু, তুমিই মুমীনের একমাত্র আশ্রয় ও ভরসা।

 

যে হাত তুলে এতোদিন তোমাকে বলেছি, হে প্রভু, বাঁচাও আমাদের। সেই হাত তুলেই আজ কড়জোরে মিনতি করছি, উঠিয়ে নাও করোনা। বাঁচাও মানুষ, বাঁচাও সভ্যতা।

আমরা সবাই তো তোমারই বান্দা, তোমারই আদরের সৃষ্টি।

রহম করো সবার ওপর।

মাওলা, রহম করো। রহম করো।

০৬/০৪/২০২০ সকাল ৬টা

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.