কবিতার সিন্ধুক - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ৩৭৯
কবিতা-৩৭৯ : কবিতার
সিন্ধুক
বুবু, শোনেন। ভাই শোনেন।
বিশ্বাস করেন, আপনাদের হৃদয় ছাড়া আমার কবিতা রাখার আর কোন জায়গা নেই।
আমার কোন পত্রিকা নেই, যেখানে ইচ্ছে হলেই আমি আমার কবিতা জমা রাখতে পারি।
আমার কোন মিডিয়া নেই, যারা আমার কবিতা স্টোর করবে।
আলু রাখার জন্য কোল্ডস্টোরেজ আছে, আমার কবিতা রাখার কোন স্টোরেজ নেই।
মানুষ কবিতা লেখে খাতায়, নীল প্যাডে, আপন জনের দেয়া ডায়রীতে।
না, ওসব কিছুই নেই আমার।
আমার ঘর এতোই ছোট, ওসব রাখার জায়গাও নেই।
বিশ্বাস করেন, আপনাদের অন্তর ছাড়া আমার কবিতা রাখার আর কোন জায়গা নেই।
মানুষ মহামূল্যবান জিনিস রাখার
জন্য আগে সিন্ধুক রাখতো ঘরে। এখন গয়না ও মূল্যবান দলীল রাখে ব্যাংকের লকারে। কোথাও
না কোথাও তো মূল্যবান সম্পদ রাখতেই হয়।
বিশ্বাস করেন, যতোই মূল্যবান হোক, গয়না হারালে আপনি আবার তা গড়তে
পারবেন। কিন্তু আমার কবিতা? কবিতা হারালে
তা আর দ্বিতীয়বার গড়া যায় না।
আগে আমি কবিতা সংরক্ষণ করতে
চেষ্টা করতাম।
পান্ডুলিপি করে সাজিয়ে রাখতাম
সুদৃশ্য ফাইলে।
একদিন সরকারী ডাকাত এসে আমার সব
পান্ডুলিপি লুট করে নিয়ে যায়। সাথে নিয়ে যায় আমার মোবাইল, ল্যাপটপ, কম্পিউটার।
সেদিন থেকে আমি নিঃস্ব হয়ে যাই।
ওরা ভেবেছিল, এতেই কবি মারা যাবে।
কিন্তু না, রাখে আল্লাহ, মারে কে?
আমি আমার কষ্টের কথা বলার জন্য
এক কবিবন্ধুর কাছে গেলাম।
সব শুনে তিনি বললেন, নশ্বর এ পৃথিবীতে কিছুুই থাকে না, থাকবে না।
আমার কবিতা কোন ডাকাত লুট করেনি।
দামী কাঠের আলমারি বানিয়ে খুব যত্ন করে সাজিয়ে তালা মেরে রেখেছিলাম, যেন কেউ ধরতে না পারে, নিতে না পারে। কী লাভ হলো?
উইঁপোকা কোন ফাঁকে সব সাবাড় করে দিয়েছে। যেদিন টের পেলাম, দেখলাম আমার প্রকাশিত ও
অপ্রকাশিত সব পান্ডুলিপি, পত্রিকার কাটিং সবই নিরেট মাটি
ছাড়া আর কিছুই না।
গাছের গোড়া কেটে ফেললে ওখান
থেকেই নতুন শাখা গজায়। মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে নবীন চারা। সে চারা আল্লাহর ইচ্ছায়
আবার একদিন মহীরুহ হয়।
আমি ফিরে এলাম। চাষ করলাম নতুন
কবিতা।
তারপর সে কবিতা ফু দিয়ে উড়িয়ে
দিলাম বাতাসে।
এখন ওরা বিশ্বব্যাপী ঘুরে বেড়ায়।
বিশ্বের প্রতিটি অন্তরকে আমি
আমার কবিতার সিন্ধুক বানিয়ে নিলাম।
কেউ চমৎকার আবৃত্তি করে সে কবিতা
আমার কাছে ফিরিয়ে দেয়।
কেউ সুর করে তা দিয়ে গান বানায়।
সেই গান দেশ বিদেশে চিত্রায়িত হয়ে ফিরে আসে আমার কাছে।
বিশ্বাস করেন, আপনাদের হৃদয় ছাড়া আমার কবিতা রাখার আর কোন জায়গা পেলাম না।
প্লিজ, একটু জায়গা দিন না। আমাকে ভালবাসার দরকার নেই, আমার
কবিতাকে একটু ভালবাসুন।
আমি আমার কবিতা আপনাদের অন্তরে
জমা রাখতে চাই। মানুষের অন্তরই তো কবিতা রাখার সিন্ধুক।
০৮/০৮/২০২০ ৯টা
অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
No comments