মি. প্রবলেম - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ১৫১

                                                                                           

কবিতা-১৫১ : মি. প্রবলেম

মি. প্রবলেম।

শুনেছি, মানুষের তামাম সমস্যা নিয়ে

আপনি নাড়াচাড়া করেন। তা আমার

সমস্যাটা কি বলবো?

 

বলুন বলুন।

কী আপনার সমস্যা?

কতদিন ধরে?

 

দেখুন, আমি একজন অন্ধ মানুষ।

সেই শৈশব কাল থেকে।

অন্ধ বলেই কোনদিন আমি আমার

অন্ধত্বকে দেখতে পারিনি।

জানি না সে কেমন? সাদা না কালো?

কতটা বড় হয়েছে দেখতে।

আমার প্রথম সমস্যা হচ্ছে,

আমি আমার সমস্যাকেই চিনি না।

যাকে আমি চিনি না তার সম্পর্কে আমি আপনাকে কি বলতে পারি, কতটুকু বলতে পারি?

 

তাতো বটেই, তাতো বটেই।

বলে যান, আমি শুনছি।

মনে হচ্ছে কোন ক্রিটিক্যাল কেস।

 

যেহেতু আমি অন্ধ তাই আমাকে

চলতে হয় বিশ্বাসের ওপর ভর করে।

মানুষ যা বলে তাই বিশ্বাস করে ফেলি।

 

ফেলবেনই তো।

এ ছাড়া আপনার উপায়ই বা কি?

তা সমস্যাটা কি?

 

আমি একটি মহাসড়কে দাঁড়িয়ে ছিলাম।

সড়কটি বললো, এ সড়কে

দুদিকেই যাওয়া যায়। সামনে ও পিছনে।

 

মি. প্রবলেম এসময় কথা বলে উঠলেন। বললেন, সড়কটা ঠিক কথাই বলেছে জনাব।

একটা সড়ক শুধু দুদিকেই যেতে পারে। এর বেশী নয়। তারপর?

 

সমস্যা হচ্ছে, আমি কোন দিকে যাবো?

 

এটা শুনে মি. প্রবলেম আপত্তি জানালেন। বললেন, না। এটা আপনার প্রথম সমস্যা হতে পারে না। প্রথম সমস্যা হচ্ছে, আপনি কেন যাবেন?

আপনি তো এখন মাথায় গামছা বেঁধে কাঁচা লঙ্কা দিয়ে পান্তা ভাত খেয়ে সময়টা পার করতে পারেন।

কিম্বা বটবৃক্ষের নিচে বসে রাখাল বালকের ন্যায় বাঁশি বাজাতে পারেন। কোথাও আপনাকে যেতেই হবে কেন?

 

মি. প্রবলেমআপনার উপমা আমার পছন্দ হলো না। আপনি বলতে পারতেন, চায়ের সাথে বিস্কিটে কামড় দিয়ে সময় পার করতে পারতেন। জমানা পাল্টে গেছে, আপনি কিন্তু রয়ে গেছেন এখনো সেই রবীন্দ্রনাথের কিশোর বেলায়।

 

হাসলেন মি. প্রবলেম। বড় রহস্যময় সে হাসি।

বললেন, অন্ধ বলেই আপনি জানেন না, বিশ্বব্যাবস্থায় সম্প্রতি কী পরিবর্তন ঘটে গেছে।

অধিকাংশ মানুষের রক্ত ঘাম লুটে খাচ্ছিল কতিপয় পুঁজিবাদী শোষক।

নারীরা ছিল স্রেফ টসটসে পিয়ারা।

ওরা বিশ্বাস করতো, সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক আল্লাহ নন, মানুষ।

যে মানুষকে আল্লাহ বানালেন নিজের গোলাম হিসাবে তাকে মানুষ মানুষের গোলাম বানিয়ে ফেললো।

অনিরাপদ হয়ে গেল পাখির অভয়ারণ্য, নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনায় পড়ে গেল সামুদ্রিক প্রাণী।

এইসব স্বেচ্ছাচার সইতে পারলেন না প্রভু। তিনি তাঁর প্রিয় সৃষ্টি রক্ষায় সচেষ্ট হলেন। পাঠালেন নানা রকম গজব।

ইতিমধ্যেই মানুষ ব্যাক টু রিটার্ন শুরু করেছে।

যতদিন মানুষ প্রকৃতির মত হাসতে না পারবে ততদিন গজবের এ ধারা থামবে  না।

শ্রমিকের অভাবে কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে।

মানুষ আবার বড় হতে থাকবে প্রকৃতির কোলে। গাছের ফল পেড়ে ভাগাভাগি করে খাবে মানুষ।

 

জ্বি,বুঝলাম। তাহলে আমার সমস্যা কি?

 

কোন কাজ করার আগে জেনে নিন, কাজটা কেন করা জরুরী। কতটুকু জরুরী। জীবন থেকে অপ্রয়োজনীয় কাজ ফেলে দিন। জীবন আপনার ভরে উঠবে অপার সুখের দীপ্তিতে।

 

জ্বী। আপনি যথার্থ বলেছেন। আমি এখন থেকে তাই করবো। অপ্রয়োজনীয় কাজ সব বর্জন করবো। আসলেই বাহুল্য মানে বোঝা।

 

শুনে খুশী হলাম। বললেন মি. প্রবলেম।

এবার দ্বিতীয় সমস্যাটা বলুন।

 

মানুষের বড় সমস্যা হচ্ছে, সে বুঝে না তার সমস্যা কি? এই যেমন আমি। আপনিই বলুন না, আমার দ্বিতীয় সমস্যা কি?

 

তিনি খুব  নিরাসক্ত কন্ঠে বললেন, মানুষের বড় সমস্যা হচ্ছে নিজেকে চিনতে না পারা।

আপনি কি আপনার স্বাধীন ইচ্ছায় দুনিয়ায় এসেছেন?

আপনি কি জানতেন কে হবে আপনার পিতামাতা?

কোন দেশে জন্ম নিবেন আপনি?

না, কিছুই জানেন না আপনি।

তবু আপনি এলেন।

আপনি কার ভালবাসার ফসল?

কে আপনাকে এমন মোহনীয় রূপে সৃষ্টি করে পাঠালেন দুনিয়ায়? কেন পাঠালেন? এটা জানা আপনার প্রথম কাজ।

যার ভালবাসা পেয়ে আপনি এ অনন্য জগত দেখলেন, তাকে কি আপনি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন?

 

আমরা ঘর বানাই থাকার জন্য।

চেয়ার বানাই বসার জন্য।

পুতুল বানাই খেলার জন্য।

তাহলে আমাকে কেন বানানো হয়েছে?

আমি কি সে কাজ করছি?

এই মৌলিক প্রশ্নের সুরাহা না করে আপনি কোন কাজে নামতে পারেন না।

 

জ্বি, খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন।

কোন কাজ করার আগে জানতে হবে আমাকেই কেন সে কাজটা করতে হবে?

এ কাজ করা কি আমার জন্য খুব জরুরী? আচ্ছা, আপনি কি জানেন আমার সৃষ্টিরহস্য?

বলবেন, কেন আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে?

 

মি. প্রবলেম হাসলেন। বললেন, জানি, জানি সব জানি। বলবো।

তবে এখন নয়। আপনার এখন রেস্ট দরকার।

ছেলেকে ডাকুন। কাল আবার আসবেন।

১১/১০/২০২০ ৮টা

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.