দূর করো এ জাহেলিয়াত - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ০৩১
কবিতা-০৩১ : দূর
করো এ জাহেলিয়াত
সত্যি বলছি, আমি ফায়ারিং স্কোয়াডে যেতে চাই। বিদায় নিতে চাই এ অসভ্য পৃথিবী থেকে।
মানুষের লোকালয় থেকে পালিয়ে গিয়ে বসবাস করতে চাই হিংস্র জানোয়ারের সাথে।
বিষধর সাপও তো পোষ মানে।
তার সাথে প্রেম করে সাপুড়ে।
আহ, যদি আমি বাঘ এবং সিংহের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারতাম! তাহলে এ
জঘন্য ও ইতর মানুষগুলো দেখে দেখে হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করতে হতো না।
প্রভু, আর সহ্য হয় না।
মানুষের নোংরামী দেখার জন্য আর
কতদিন বাঁচতে হবে আমাকে?
কতদিন আমাকে শুনতে হবে পিতার
হাতে কন্যা ধর্ষণের খবর?
কুসুমকন্যা ঐশীর হাতে কেন নিহত
হয় আপন পিতা মাতা?
এ কেমন সমাজ, এ কেমন সভ্যতা?
প্রভু, তুমি মানুষের মনে যে মায়া, মমতা, প্রেম ও ভালবাসা দিয়েছিলে সেগুলো শুষে নিলো কোন অসভ্যতা?
স্বামী কেন স্ত্রীর গায়ে এসিড
মারে? থানায় নিরাপত্তা চাইতে গিয়ে
কেন ধর্ষিতা হয় হুসনার মা?
কোথায় আজ সামাজিক নিরাপত্তা?
যে নিরাপত্তার চাদর তুমি
পাঠিয়েছিলে ঊষর মরুভূমিতে, সে চাদর মাথার ওপর থেকে সরিয়ে নিল কে?
মনে পড়ে তনুর কথা।
ধর্ষণের পর কারা তনুকে হত্যা করে
কেন্টনমেন্টের ভেতরে ফেলে রেখেছিল?
ভার্সিটি পড়ুয়া কন্যাকে বাসের
ভেতর ধর্ষণ করাকে কি আধুনিকতা বলে?
ধর্ষণে সেঞ্চুরি করে সেলিব্রেট
করবে লম্পট, এ জন্যই কি বাংলার কৃষক রক্ত ও ঘামের পুরাণ দিয়ে ভার্সিটি বানিয়েছিল?
হায়, এটা প্রগতি না অধোগতি?
ধর্ষিতা মেয়েদের কান্নার ধ্বনি
আমাকে পাগল করে তোলে। মনে হয়, হায়,
এই কান্না শোনার আগে আমার মরণ
হলো না কেন?
প্রভু, এমন নিষ্ঠুর সমাজে তুমি আমাকে কেন পাঠালে?
আমার সুবোধ ছেলে ভার্সিটি গিয়ে
কেন অস্ত্রের মহড়া দেয়?
সতীর্থকে ফেলে দেয় তিন তলা থেকে?
আমার ইঞ্জিনিয়ার বানানোর স্বপ্ন
কেন লাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে?
বাংলাদেশ কি কোন কসাইখানা?
যেখানে আমার অমায়িক হাফেজ
ছেলেটিকে জঙ্গী অপবাদ দিয়ে
ধরে নিয়ে জবাই করা হয়?
তিন মাস পর যার ক্ষতবিক্ষত লাশ
পাওয়া যায় সাতক্ষীরার ধানক্ষেতে।
এলাকার গন্যমান্য লোকেরা সে লাশও
আমাকে আনতে দেয় না।
বলে, সাবধান, তাহলে তুমি হবে জঙ্গীর বাপ। তুমিও জঙ্গী হয়ে
যাবে।
হায়, তাহলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো? আমার হাফেজ ছেলেটাকে আমি
দাফনও করতে পারলাম না,
এ কষ্ট আমি কোথায় রাখবো?
আমার ছোটভাই সেই যে শাপলা চত্বর
গেল, আর ফিরে এলো না।
ভাই, তুই কবে ফিরবি?
যখনি এসব ভাবি,
যখনি এসব ভাবি, আমার কেবলই মরে যেতে ইচ্ছে করে। প্রভু, তুমি যে কেন আত্মহত্যার
অনুমতি দিলে না!
আত্মহত্যার অনুমতি দিলে তোমার
এমন কি ক্ষতি হতো!
প্রতিক্ষণ যন্ত্রণার চাইতে তাহলে
আমি বেঁচে যেতাম।
প্রভু, তুমি শুধু একবার আমাকে আত্মহত্যার অনুমতি দাও।
এই নষ্ট পৃথিবীতে আর আমি
বাঁচতে চাই না।
বাঁচতে চাই না।
প্রভু, নইলে আমাকে তুমি শক্তি দাও,
আমি যেন আমার মেয়ের
কান্না থামাতে পারি।
আমি যেন আমার হাফেজ ছেলেকে
নিরাপদ রাখতে পারি
এই বাংলার মাটিতে।
প্রভু, তোমার কোরআনকে যেই-ই অপমান করুক আমি যেন তার হাত গুড়িয়ে দিতে পারি।
আফসোস! আমি আজকের মত এমন
অন্ধকার পৃথিবী কোথাও দেখিনি।
এমন নিষ্ঠুর স্বৈরাচার দেখিনি।
এমন অসভ্য সমাজ দেখিনি।
কেন তুমি আমাকে আত্মহত্যার
অধিকার দিলে না প্রভু?
কেন দিলে না সমস্ত অশুভকে বিনাশ
করে প্রসন্ন প্রভাত আনার দুর্জয় শক্তি?
আমাকে শক্তি দাও। সাহস দাও।
হিম্মত দাও। গায়েবী মদদ দিয়ে
দূর করে দাও আধুনিক অমানবিক এ
জঘন্য জাহেলিয়াত।
০৮/০৩/২০১৮
অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
No comments