শান্তিখেকো বিবর্ণ সময় - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ৪২৫

   

কবিতা-৪২৫ : শান্তিখেকো বিবর্ণ সময়

শহুরে গ্রাম্য ছেলেটি অনেকদিন পর

বাড়ি গেল। এ গ্রামের এক কুড়েঘরে তার জন্ম হয়েছিল। ঘরটি ছিল মাটির। যেখানে সে বড় হয়েছিল। মক্তবে গিয়েছেল, পাশের স্কুলে শিখেছিল অ আ ক খ।

 

আজ মা-বাপ নেই। চাচী মামী খালা ফুপু কেউ বেঁচে নেই। পুরুষগুলো তার আগেই বিদায় নিয়েছে। বোনদের বিয়ে হয়ে এখন কে কোথায় সংসার করছে সবার খবর সে জানেও না।

 

সে বাড়ি এলো। দেখলো মাটির ঘর ভেঙে সেখানে ইটের দালান। যারা চিনতো তারা এসে হাত মিলালো। তাদের সন্তান ও নাতিরা হা করে তাকিয়ে দেখছে আগন্তুককে।

 

তার মনে পড়লো শৈশবের কথা। ফজরের আজান হলে পুরুষরা দল বেঁধে মসজিদে চলে যেতো। ঘরদ্বোর উঠোন ও চৌহদ্দি ঝাঁড় পোঁচ করতো মা-চাচীরা। বাবা মসজিদ থেকে এসে গোয়ালের গরু বের করতেন। গোয়াল ঘর পরিষ্কার করতেন।

মা খোঁপ থেকে মোরগ বের করে নাস্তা বানাতো। ঘরদ্বোর ঝাড়ু দিতো। আমরা ঘন বাসকপাতার বেড়া পেরিয়ে মক্তব থেকে ঝকঝকে তকতকে উঠোনে ফিরতেই মা পাটি বিছিয়ে বলতো, নাস্তা খা।

 

আমরা বাসকপাতার ফাঁকে সাদা সাদা ফুলের মধু খেতাম। সেই শৈশব এসে বললো, কেমন দেখছো শহুরে বালক?

 

কি জবাব দেবো ভাবছিলাম।

ফজর পরেই তো আবার ঘুমায় শহরের মানুষ। রাত কেটে যায় নেটে নেটে, কারোবা তাহাজ্জুদ পড়ে।

সূর্য দেখে না, ভোরের স্বর্গীয় বাতাস গায়ে মাখে না। বাসি ঘরে শুয়ে থাকে। ন/দশটায় বুয়া এসে আগের রাতের বানানো রুটি শেঁকে দিলে গতরাতের বাসি টেবিলে ফ্রিজের ঠান্ডা তরকারী ওভেনে গরম করে নাস্তা করে শহুরে বালক।

 

পাটি কই, পিঁড়ি কই? যাদের আপিস আছে তারা হয়তো একটু তাড়াহুড়ো করে। কাউকে দেখি না শিউলিফুল টোকাতে। দেখিনা বকুল ফুলের মালা গাঁথতে। ব্যস্ততা, ব্যস্ততা ব্যস্ততা।

 

 কোথায় গেল গল্প করার চাপল্য শৈশব, কোথায় বাতাসের মিষ্টি পরশ, কোথায় গেল গল্প করার সুবর্ণ অঢেল সময়? হায় আধুনিকতা।

হায় শান্তিখেকো বিবর্ণ সময়।

৫ই নভেম্বর ২০২৩; বাদ মাগরিব।

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.