আরেক জান্নাত - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ৪৩৯

          

কবিতা-৪৩৯ : আরেক জান্নাত

আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ।

হে রব, আলহামদুলিল্লাহ পড়ে যে আমার আশ মেটে না। মনে হয়,

পড়তেই থাকি, পড়তেই থাকি।

না কিছুই লুকাবো না আজ।

 

এই আমি একদিন স্বচ্ছল ছিলাম। তারপর এলো সেই দুর্যোগের কাল। একদল দস্যু এসে আমার দোকানে তালা মেরে দিল। আমাকে বন্দী করলো আবদ্ধ খাঁচায়।

 

দোকানের জন্য কিছু ঋণ নিয়েছিলাম। বন্দী অবস্থায় তা পরিশোধ করতে পারিনি। যারা সারাক্ষণ আমাকে স্যার স্যার করতো, ভালবাসতো, সেই প্রিয়ভাজন ব্যাংকারগণ আমার নামে মামলা করলো।

 

ঋণ পরিশোধের জন্য আমি অস্থির হয়ে পড়লাম। এ সময় আমার একমাত্র মেয়ের ক্যান্সার ধরা পড়লো। আমিও ওপেনহার্ট করে শুয়ে রইলাম হাসপাতালে।

তারপর স্ট্রোক করলাম। ডায়াবেটিস বেড়ে গেল।

 

তোমার মেহেরবানী খোদা, মৃত বাবার জমি বিক্রি করে ঋণমুক্ত হলাম। তোমার অপার অনুগ্রহে থাইল্যান্ড থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে এলো আমার আনন্দ জোসনা একমাত্র মেয়ে। কী আমার আনন্দ!

 

কিন্তু ঢাকায় বাসা ভাড়া দিতে পারি না। বউ তার গহনা বিক্রি করলো। আমি বিছানায় শুয়ে শুয়ে দেখলাম তার রাতের বিগলিত কান্না। তুমি সোনার বিনিময়ে মুক্ত করলে তোমার প্রিয় বান্দীকে। কবুল করলে তার হৃদয়ের আকুতি। এই তো জীবন।

 

দুঃখ কারো চিরদিন থাকে না।

কবিরও না।

ভাবলাম বাড়ি চলে যাই। কিন্তু দীর্ঘদিন হয় বাড়ি যাই না। যাওয়ার কোন পরিবেশও নাই। মা-বাপ হারা এতীমের ঘর বাসের অযোগ্য।

 

গাছতলায় গিয়ে বসে থাকি।

সবার পরামর্শে সেখানে ঘর তোললাম। ঘর কি বাড়ি? কতকিছু লাগে। দুর্জনের রোষানল বাড়ি যেতে দেয় না।

 

এক বন্ধু বললো, বাড়ি কর। তোর রূমের এসি আমি দেবো। আমি এখনো তাকে বলিনি, আমি ঘর তুলেছি।

আমার ঘরের জোসনা, আমার নিজস্ব কোকিল আমাকে বললো, বহুদিন হয় তোমার কাব্যগ্রন্থ বের হয় না। আমি টাকা দিচ্ছি, একটা বই বের করো। আমি বললাম, টাকা কই পাবে? সে বললো, আমার মোহরানার টাকা।

 

আমি নেইনি। তোমাকে বললাম, হে প্রভুআমাকে দিয়ে যে কবিতা তুমি লিখিয়েছো তা যদি সমাজের দরকার না হয়, আমারও দরকার নেই। আর না হয় এগুলো প্রকাশ করার ব্যবস্থা তুমিই করো।

 

তোমার কি মেহেরবানী। আমার এক অচেনা প্রেমিক তার প্রেমের টানে আমার কাব্যসমগ্র বের করে দিল বিদেশ থেকে এসে।

হে প্রভু, আমি তোমার অকৃতজ্ঞ বান্দা হবো কেমন করে?

 

প্রভু, তোমার সন্তুষ্টি ছাড়া এ জীবনে আর কিছুই চাওয়ার নেই আমার। তোমার অবারিত মেহেরবানীর শোকর আদায় করার কোন ভাষা ও সাধ্যও নেই আমার।

 

ঘুমঘোরে যে অনিন্দ্য কানন ও সরোবরে তুমি আমাকে নিয়ে যাও, পৃথিবীর মানুষ কোনদিন তা অবলোকন করেনি। বলো, তোমার কাছে আর কি চাইবো আমি?

আমার খাট, এ যেন আরেক জান্নাত।

৩০শে ডিসেম্বর ২০২৩; বাদ মাগরিব।

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.