কিছুই দেখছে না সে - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ৪২৮

      

কবিতা-৪২৮ : কিছুই দেখছে না সে

টগবগে যুবকটি পড়ে রইলো পীচঢালা রাস্তায়।

কয়েকটা হেলমেট বাঁশি বাজিয়ে  মুহূর্তে চলে গেল অন্ধকারের ভেতর।

গুলিটা যুবকের বুক এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে।

একটু আগেও ছেলেটি যুবক ছিল, এখন কে যেন লাশটা চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়েছে।

 

একটু পর।

কারফিউ শিথিল হয়েছে এক ঘন্টার জন্য।

টর্চের আলোতে লোকেরা দেখলো চাপ চাপ রক্ত ভেজা রাস্তা।

প্যান্ট সার্ট পরা যুবকের মুখ বন্ধ কিন্তু চোখ খোলা।

তবু, কিছুই দেখছে না সে।

 

কে এই যুবক?

কেউ চিনলো না তাকে। লোকজন বলছে, এ মহল্লার কেউ নয় সে।

না হোক, কিন্তু এই এক ঘন্টার মধ্যেই তার শেষকৃত্য সমাপ্ত করতে হবে।

 

কয়েকজন যুবক ছুটে গেল গলির শেষ মাথায় কবর খোঁড়ার জন্য।

চন্দন বাবু বললেন, আরে মিয়া, লাশটা কি হিন্দুর না মুসলমানের, দেখেছো? যোশেফ বললোবাবু, ও তো বৌদ্ধ বা খ্রিস্টানও হতে পারে। আরেকজন বললো, ও সাহেব, ও হিন্দু মুসলমান না হয়ে ধর্মনিরপেক্ষও তো হতে পারে।

লাশ তো কোন জাতপাত, ধর্ম মানে না। তাদের কেন ধর্ম নাই।

 

কার্ফুর সময় শেষ হয়ে গেল এই করতে করতে। আগ্রহী জনতা ঝুপ করে ঘরে ঢুকে গেল। নেতা গোছের যারা ছিল, তারা বললো, এ মিমাংসা পরে করলেও হবে। আপাতত ওকে রাস্তা থেকে সরান।

 

ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক নেতাগোছের ব্যক্তি বললেন, ও আমাদের ছেলে, ওকে অফিসে নিয়ে যাও। অমনি বাদ সাধলো অন্য দল।  বললো, বাবু, এ ঠিক না, ও আমাদের ছেলে।

এভাবে স্বার্থপর আরো কয়েকজন রাজনীতিবিদ লাশটিকে তাদের বলে দাবী করলো। কে যেনো বললো, লাশ কারো দলের হয় না, মানুষটা দলের হলেও লাশ হয় কবরের। লাশ হয় শুধুই মা ও বোনের।

 

আবার বিউগল বেজে উঠলো অন্ধকারে।

দুটো লাইট আস্তে আস্তে উজ্জ্বল হলো।

ক্রমশঃ লাশটি দৃশ্যমান হলো।

নিভে গেল যানের আলো। তার আগেই কয়েকটি হেলমেট লাফিয় নামলো।

মনে হয়, লাশটি ধরাধরি করে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। গাড়ী ছাড়ার আওয়াজ শোনা গেল।

 

আঁধারে হারিয়ে গেল গাড়ি। হারিয়ে গেল কারো ভাই ও সন্তান।

হারিয়ে গেল একটু আগের কেশর ফোলানো যুবক।

হারিয়ে গেল একটা তরতাজা লাশ।

এখন আর হুইশেল শোনা যাচ্ছে না।

 

কেউ জানলো না তারপর লাশটির কি হলো?

তার কি কবর হয়েছিল?

নাকি পোড়ানো হয়েছিল?

নাকি অন্য কোন উপায়ে সম্পন্ন হয়েছিল তার শেষকৃত্য?

 

সবাই জানলো নির্মম সত্য।

একজন মায়ের সন্তান হারিয়ে গেল। একজন বোনের ভাই হারিয়ে গেল।

একজন তরতাজা যুবক হারিয়ে গেল।

জানা গেল না সে কোন দল করতো।

কোন ধর্মের লোক খুন হলো।

শুধু জানা গেল,

জানোয়ারের হাতে একজন মানুষ মারা গেল।

মারা গেল এক আদম সন্তান।

১৬ই নভেম্বর ২০২৩; বাদ আছর।

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.