প্রতিবাদী তিতুমীর - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ৪০১

                

কবিতা-৪০১ : প্রতিবাদী তিতুমীর

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আর

পেছনে ফেরার সাধ্য নেই আমাদের।

আকস্মিক সিডরে তছনছ হয়ে গেছে ঘরবাড়ি।

বর্ষণের প্রথম রাতেই নিভে গেছে

আশার দীপ্যমান আলো।

এরপর তুফানের তান্ডবে উপড়াতে শুরু করেছে শতাব্দী প্রাচীন বৃক্ষের উন্মুল শিকড়। যতোই বাড়ছে ঝড়ের তান্ডব ততোই ভাঙছে ডালপালা। গুম হয়ে যাচ্ছে সবুজ পত্রপল্লব।

ডানে আজদাহা সাগর হা করে আছে আমাদের গিলে ফেলার জন্য, বামে সম্প্রসারণবাদী মতলববাজ বন্ধুর মিছরির ছুরি।

 

আমরা এখন কোথায় যাবো, কোন দিকে যাবো? নাকি বসে বসে মৃত্যুর প্রহর গুনবো?

 

আমরা কি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো আমাদের হাসপাতালগুলোতে বোমা পড়ছে? তাতে মারা যাচ্ছে যে মানবাত্মা, সে শিশু না বুড়ো, হিন্দু না মুসলিম, ধনী না গরীব, এসব দেখার দায়িত্ব কোনদিনই কোন আততায়ী নেয় না, নেবে না।

বোমা পড়ছে মন্দিরে, মসজিদে, গীর্জায়, তাতে আততায়ীর কিছু যায় আসে না। বাঙালি নিহত হলেই লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেতে পারবে, হোক সে জামায়াত, বিএনপি বা আওয়ামী লীগ।

বাংলার বারো ভূঁইয়াদের চিরকালই ভয় পায় দিল্লীর সেন বাবুরা। তারা চায় না বাংলায় জন্ম নিক কোন তিতুমীর, হাজী শরিয়তউল্লা। কোন মেজর জলীল আটকে দিক লুটেরাদের লুট করা অস্ত্র ভান্ডার।

 

রক্ষী বাহিনীর হাতে অস্ত্র তুলে দাও লাল বাহিনী দাবড়ানোর জন্য, গণবাহিনীকে বলো বুর্জোয়া নিধন করতে, টগবগে তরুণদের হাতে লাল ঝান্ডা দিয়ে ত্রিশ হাজার মশাল পুড়িয়ে দাও। মুজিব বাহিনী দিয়ে চিনি চোরের বিশ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে নিঃশ্বেষ করে দাও, যেন কেউ মাথা তুলতে না পারে।

এবার নিষ্পাপ চাঁদগুলোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করো যুদ্ধাপরাধী আখ্যা দিয়ে।

কোরানের পাখিকে মারলে মানুষ ক্ষিপ্ত হবে? দরকার কি রিস্ক নেয়ার। গুলি নয়, ফাঁসি নয়, সবার অলক্ষ্যে পয়জন পুশ করে দাও।

 

আমরা ওদের এমন শরবত খাওয়াবো, জাতির পিতাকে হত্যা করবে চৌকস মুক্তিযোদ্ধারা, মসনদে বসতে বাধ্য হবে তারই অন্তরঙ্গ বন্ধু গিরগিটি খন্দকার।

আর মুক্তিযুদ্ধের সূর্যগুলোকে সে হত্যা করবে জেলখানায় দিল্লীকা লাড্ডু খেয়ে।

 

এভাবেই, একটা সময় পর্যন্ত আমরা মাতালগুলোকে দিয়ে উপড়ে ফেলবো একটার পর একটা বিষবৃক্ষ। কাটা ডালের মত যখন লুটিয়ে পড়বে  জিয়া, মঞ্জু, তাহের ও সেনাবাহিনীর সবকটা মাথামোটা অফিসার তখন শুরু হবে নতুন খেলা।

একাত্তুরে পাক বাহিনী কোন মুক্তিযোদ্ধার হাতে পরাজয় স্বীকার করার সুযোগ পায়নি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বা স্বাধীন বাংলা সরকারের হাতেও ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি নিয়াজী, একাত্তুরে পাক বাহিনী সারেন্ডার করেছিল ভারতের কাছে, এটাই যে মুক্তিযুদ্ধের শেষ কথা।

এভাবেই বাঙালরা মহাভারতের নাগরিক হয়ে যাবে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একদিন ঘুম থেকে উঠে ওরা দেখবে, তাদের স্বাধীনতা দিল্লীর যাদুঘরে শোভা পাচ্ছে।

 

হে বাঙালী, এভাবে নতুন করে ভাবতে শেখো। দেখো, দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। কোথাও পালাবো সে সুযোগও নেই।

গণতন্ত্রের ঘোড়ায় চড়ে আমাদের দাবড়ে বেড়াচ্ছে বিশুদ্ধ কাপালিক।

চোখের সামনে নৃত্য করছে মৃত্যুদূত। আমরা চরম উৎকন্ঠা নিয়ে তাকিয়ে আছি আসমানের দিকে। কখন আসবে ফয়সালা

কেনো, তোমরা কি জানো না, যে জাতি নিজেকে রক্ষা করার জন্য সচেষ্ট হয় না, আল্লাহও তাদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেন না।

 

আমি জানতে চাচ্ছি, তোমরা কি চোখ বন্ধ করে ভদ্রলোকের মত মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হবে, নাকি লেন্দুপ দর্জিকে কাঁধ থেকে নামিয়ে রুখে দাঁড়াবে কোন প্রতিবাদী তিতুমীর?

৬ই সেপ্টেম্বর ২০২৩; বাদ ফজর।

অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।

No comments

Powered by Blogger.