ঈমানের মূল্য - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ৪১৬
কবিতা-৪১৬ : ঈমানের মূল্য
মাকসুদা, অন্ধকারে বাতি নিভিয়ে চুপচাপ বসে আছি বিছানায়।
ভাবছি তোমার কথা।
আমার মাথার ওপর ফ্যান ঘুরছে, তুমি গরাদের অন্তরালে কংক্রিটের মেঝেতে কাটাচ্ছ বিনিদ্র প্রহর।
কী অপরাধ তোমার?
পবিত্র রমজানে কোরানের আলোয়
সাজাচ্ছিলে হৃদয় ভূ-ভাগ, এই কি অপরাধ? শুধু আমি কেন, যারা
তোমায় চেনে তারা জানে, তোমার মত পূন্যবান নারী এ সমাজে
সত্যি দুর্লভ।
এই ভাল মানুষ হওয়াটাই কি অপরাধ তোমার?
যৌবন ঝুলিয়ে যারা ট্রয়নগরীর ধ্বংস ডেকে আনে, তুমি সেখানে হেজাবের পবিত্রতা ছড়িয়ে দাও। এই পবিত্রতা ছড়ানোই কি তোমার অপরাধ?
আমি ভাবতে পারছি না, আমি এখন কোন অসভ্য নগরে বসবাস করছি।
নব্বইভাগ মুসলমানের দেশে রোজা রাখা অপরাধ! শরিয়ত মানা অপরাধ?
আর এ অপরাধে রোজাদার বয়স্ক মহিলাদের ধরে নিয়ে গারদে পুরতে হবে?
ওরা কি জানে, জীবন থেকে মৃত্যুর দূরত্ব কত? যখন থামবে এই দেহঘড়ি
তারপর কী হবে? নধর শরীর হবে পঁচা লাশ। দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার জন্য
সেই লাশ মাটিচাপা দেবে মানুষ। (ওরাতো ফেরাউন নয় যে, ওদের লাশ মমি করে রাখা হবে।)
মাকসুদা, মিন্টুরোডের যেখানটায় এখন তুমি আছো তার বাউন্ডারি দেয়াল সরালেই মন্ত্রীপাড়া। যদি সামান্য এ দেয়াল অপসারিত হয়, যদি তুমি বনে যাও তার বাসিন্দা, যারা তোমাকে গারদে ভরেছে তারাই ‘স্যার, স্যার’ বলে স্যালুট ঠুকবে। এটাই ইতিহাস।
ক্ষমতার মসনদের দূরত্ব তো এক দেয়ালের বেশী নয়। বুঝি না, ওরা তোমাকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য কেন হন্যে হয়ে আছে? কেন ধরে ধরে তোমাদের চেনাচ্ছে মিন্টুরোড?
মাকসুদা! দেখতে দেখতে এসে গেল কদরের রাত, তুমি জেলখানায়।
কংক্রিটের মেঝেতে লুটিয়ে কাঁদছো তুমি, তাতে কাঁপছে আল্লাহর আরশ।
তোমার অশ্রু অপার্থিব সৌরভে ভরা। মনে হয় ফেরেশতারা বেহেশতের
সেন্টের কৌটা উপুড় করে দিয়েছে। জেলখানার দেয়াল টপকে সে সৌরভ
এসে আদর করছে আমার নাসিকায়। তুমি কাঁদছো, সে সৌরভ
ছড়িয়ে পড়ছে বাংলার হাটে, মাঠে, বাটে।
তুমি কাঁদছো, ইথারে ইথারে সে সৌরভ ছড়িয়ে পড়ছে প্রতি ঘরে ঘরে। তুমি কাঁদছো, সে সৌরভ বুকের পাঁজর ভেদ করে ঢুকে যাচ্ছে মানুষের হৃদয়ের গভীরে।
যারা বাংলার মায়েদের শান্তিতে ইফতার করতে দেয়নি, যারা এই
রমজানে সন্তানকে বঞ্চিত করেছে মায়ের আদর থেকে, যারা
পবিত্র হেজাবের অসম্মান করেছে, কোরানের মজলিশ থেকে
মেয়েদের ধরে নিয়ে যারা অপমান করেছে কোরআনের,
যারা ঈদের আনন্দে বাংলার মানুষকে উপহার দিয়েছে রোদনের হাহাকার,
আমার কি দায় ঠেকেছে তাদের তাবেদারী করার?
কী দায় ঠেকেছে তাদের নেতা বানানোর?
দুশ্চরিত্র প্রতারকদেরই বার বার ভোট দিতে হবে?
তাদের হাতেই তুলে দিতে হবে গদীর ম্যান্ডেট?
তবে আল্লাহর গযব ফেরাবো কী দিয়ে?
আল্লাহর সাথে বান্দারতো স্রেফ দুরকম সম্পর্কই হয়, একদল তাঁর পছন্দের আরেকদল অপছন্দের, আমার নাম লেখা হবে কোন্ দলে? আমার ঈমানের কী কোন মূল্য নেই?
২রা জুলাই ২০২৩; বাদ ফজর।
অপ্রকাশিত অন্যান্য কবিতার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
No comments