বন্ধু ও শত্রু - অপ্রকাশিত কবিতাঃ ৪০৪
কবিতা-৪০৪ : বন্ধু ও শত্রু
এ কোথায় এলাম আমি?
চারদিকে শত্রু, চারদিকে আজদাহা দুশমন?
প্রকাশ্য দুশমন তবু ভাল,
দেখা যায়, লড়াইও করা যায়।
কিন্তু বন্ধুবেশী শত্রু বড় ভয়ংকর।
ওদের সাথে লড়াই করে করে আমি হয়রান।
অদৃশ্য গোলাপ দেখা নিষেধ।
কতবার বলেছি ওকে
ওদিকে তাকাবি না।
কে শোনে কার কথা?
পা কে বলেছি,
সাপের রাজ্যে যাবি না।
পা আমাকে না বলেই
ঢুকে পড়ে সাপের পাহাড়ে।
একটামাত্র মন।
ওকে বলেছি,যেখানেই যাস
বিবেক হুজুরকে বলে যাবি।
কিন্তু হা কপাল! বেয়াড়া মন
কখন যে কোথায় থাকে খবরই পাই না।
আমি যখন নামাজে দাঁড়াই,
দরবেশবেশী বন্ধু এসে বলে,
চল বাদাবনে বাঘ দেখতে যাই।
সবাই স্পষ্ট দেখতে পায়
আমি গভীর সিজদায় মগ্ন,
কিন্তু আমি যে তখন আফ্রিকার গভীর বনে বাঘের ভয়ে
পালাচ্ছি তা কি কেউ দেখে?
কাকে বিশ্বাস করবো আমি?
নিজের সাড়ে তিনহাত দেহটাকে
বশে রাখতে পারি না,
স্বপ্নে সিংহ মারি। আর নিজেকে ভাবি,
মোহাম্মদ আলী ক্লে।
আমার হাত আমার কথা শোনে না।
আমার পা আমার কথা শোনে না।
আমার চোখ আমার নিষেধ মানে না।
লোকে বলে, আমার নাকি হৃদয় আছে,
কোনদিন দেখলাম না তারে।
কে আমাকে বলে রাজ্য শাসন করতে?
না, না, পারবো না আমি।
আমার মাথার ভেতর
শয়তান বাসা বাঁধে, আর বলে,
মসজিদটা পাকা করে দে,
লোকে তোকেও ডাকবে
দানবীর হাজী মহসিন বলে।
তুই তখন আদ্দি পাঞ্জাবী থেকে
পিঁপড়া তাড়াবি।
ভাবি, এরা কেমন করে আমার বন্ধু হয়?
বন্ধু হলে কি আমার চোখ আমাকে
জাহান্নামে যাবার পথ করে দিতো?
হায়, আমার পিঠে কোন চোখ নাই।
থাকলে তো আর অদৃশ্য আততায়ী
এভাবে অতর্কিতে এসে
আমাকে ছুরি মারতে পারতো না।
যে লোকটা সামনে থেকে চিৎকার করে
বলছিল,সাবধান নওজোয়ান,
ঘুরে দাঁড়াও, নয় মরবে, আমি তাকেই ভেবেছিলাম আমার দৃশ্যমান দুশমন।
হায় মানুষ কত বোকা,
সে আজো আপনপর চিনলো না।
যে আমাকে সাবধান করে,
বলে, ও পথে হেঁটো না, ও পথে পাপ,
আমি তাকে অভিশাপ ভেবে এড়িয়ে যাই।
আর তাকেই জড়িয়ে ধরি বুকে, যে,
বগলের তল থেকে ছুরি বের করে আমার মাংসল পেটে ঢুকিয়ে দেয় অবলীলায়।
পৃথিবী বড় অদ্ভুত।
এ পৃথিবীর মানুষ নিজেই নিজের শত্রু।
১লা নভেম্বর ২০২১; বাদ মাগরিব।
No comments